দিনাজপুরের হিলিতে মাঘ মাসে হঠাৎ বৃষ্টিতে ২৫০ হেক্টর আলুর ক্ষেতে পানি জমেছে।এতে করে আলুর গাছ মরে গিয়ে ও আলুতে পচন ধরার আশংকা তৈরি হয়েছে।সেই সাথে সরিষার ক্ষেতেও পানি জমেছে আবার অনেক সরিষা গাছের ডাল ভেঙ্গে গেছে। এতে করে আলু ও সরিষার উৎপাদন খরচ উঠানো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তেমনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শংকা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে হিলিতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে তা শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে বৃষ্টিপাত। এরপরে বিকেল থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর আবারো রাত সাড়ে ৮টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয় সারা রাতই থেমে থেমে বৃস্টিপাত হয়। এদিকে শনিবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে তবে এখনো বৃষ্টিপাত হয়নি।
হিলির ইসমাইলপুরের কৃষক ইনছান আলী বলেন, একবিঘা জমিতে আলু আবাদ করতে ১৫ থেকে ২০হাজার টাকার মতো আমাদের খরচ হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুক্রবার দিনভর বৃস্টিপাতের কারনে আমাদের যে ক্ষয় ক্ষতি হলো তা বলে বোঝানো যাবেনা। আমরা একটা আলুও ক্ষেত থেকে তুলতে পারবোনা এমন অবস্থা হয়ে গেছে। আর কয়দিন পরে এসব আলু উঠানো হতো এমন সময় বৃষ্টিপাতে আমাদের তৈরি আবাদ একেবারে নষ্ট হয়ে গেলো।আমাদের যে পরিমান খরচ হয়েছে তার একটি টাকাও আমরা তুলতে পারবোনা এতে করে আমাদের কৃষকদের তো লোকশান। এখন সরকার যদি আমাদের কৃষকদের দিক একটু দেখে তাহলে আমরা বাচতে পারবো তাছাড়া সম্ভব নয়।
একইগ্রামের অপর কৃষক মোস্তাক আলী বলেন, এখন তো আমাদের আলু তোলার মৌসুম আর কয়েকদিনের মধ্যেই এসব আলু তোলা শুরু হয়ে যেতো।কিন্তু হঠাৎ করে এই বৃষ্টিতে আমাদের আলুর ডারা ও কান্তিতে পানি জমে থৈ থৈ করছে পানি জমে আছে পানি সেচে দিলেও কমছেনা। এতে করে আমাদের আলুর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেলো কৃষকদের স্বপ্ন ধুলিষ্যাৎ হয়ে গেলো। আমরা লাভের আশায় যে টাকা খরচ করে আলু আবাদ করেছি কিন্তু এর একটাকাও আমরা পাবোনা এতে করে আমাদের কৃষকদের লোকশান।
অপর কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, অসময়ের বৃষ্টিপাতের কারনে আমাদের আলু একেবারে সব পচে গেছে।বাপ ও ছেলে মিলে আমরা আলুর জমিতে থাকা পানি সেচতেছি তারপরেও কমতেছিনা পানি। যদি নতুন করে বৃষ্টিপাত না হয় আগামী দুই থেকে তিনদিন টানা রোদ হয় তাহলে পানি সেচে দিয়ে কিছুটা রক্ষা হতে পারে তাছাড়া সম্ভব না। আর একেতো এখন আলুর বাজার খারাপ দাম তেমন নেই আমরা যেভাবে কষ্ট করে এই আলুর আবাদ করেছি এই বৃষ্টিপাতের কারনে আমাদের আলু আবাদের টাকাই উঠবেনা।একবিঘা জমিতে ২০ থেকে ২৫হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে খেয়ে না খেয়ে ধার দেনা করে এবারে ৩বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলাম কিন্তু এখন কি করবো সেই চিন্তায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।এই বৃষ্টিপাতের কারনে আলুতে পচন দেখা দিবে আবার দাগ দেখা দিবে যার কারনে সেই আলু বাজারে বিক্রি করতেও পারবোনা।
একই গ্রামের সরিষা চাষী বাবুল হোসেন বলেন, আমি এবারে সরিষা চাষাবাদ করেছি কিন্তু এগুলো পাকতে আরো কিছুদিন সময় লাগতো।কিন্তু বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুরু করে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রচুর পরিমানে বৃষ্টিপাতের কারনে আমার সরিষার ক্ষেত পানি জমে গেছে, এত করে গাছগুলো সব হেলে পড়েছে সরিষার ডালগুলো ভেঙ্গে পড়েছে।আবারো শুক্রবার রাতেও বৃষ্টিপাত হয়েছে এতে করে যে ক্ষতি হচ্ছে এর উপর আবারো যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে আমাদের সরিষার ব্যাপক ক্ষতি হবে।সরিষার যে ফলন সেটি পাওয়া যাবেনা এতে করে লাভের আশায় আমরা যে সরিষা লাগিয়েছি উল্টো আমাদের লোকশান গুনতে হবে। এখন আমরা এই সরিষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি কিভাবে এর খরচ উঠবে আমাদের।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড.মমতাজ সুলতানা বলেন, মাঘ মাসের হঠাৎ বৃষ্টিতে উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমির আলুর ক্ষেতে পানি জমেছে। এছাড়া কিছু সরিষা ও গমের জমিতে পানি জমে আছে।আমরা তাদের পরামর্শ দিচ্ছি সেই ক্ষেতগুলো থেকে দ্রুত পানিগুলো বের করে দিতে। যদি এসব জমি থেকে দ্রুত পানি বের করা যায় ও আবহাওয়া ভালো হয় আর যদি পানি না হয় তাহলে সমস্যা হবেনা। আর সরিষা যেহেতু কাটা শুরু হয়েছে তবে যেগুলো পানিতে শুয়ে আছে রোদ হলে ও পানি কমে গেলে কিছু দাড়াতে পারে আর কিছু দাড়াতে পারবেনা আর যেগুলো দাড়াতে পারবেনা সেগুলো ক্ষতির সন্মুক্ষিন হবে। এক্ষেত্রে রিকোভারী করা সম্ভব হবে, তবে পরবর্তীতে আলুর ক্ষেত্রে লেটব্রাইট রোগ দেখা দিতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর দিনাজপুর এর ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আজ দিনাজপুর অঞ্চলে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ৯৫শতাংশ,বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৪/৫ কিলোমিটার। বৃষ্টির পরিমান দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়েছে ৫৯মিলিমিটার। আজ বিকেল থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা হ্রাস পেতে পারে।