সয়াবিন, সরিষাসহ ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবারের তেলের চাহীদা মেটাতে এবং সরিষার ব্যাপক চাহীদা ও দাম ভালো পাওয়ার কারনে সরিষা চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় দিনাজপুরের হিলিতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষার চাষাবাদ। যার কারনে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে সরিষার চাষাবাদ করা হয়েছে। সামনের দিনে সরিষার চাষাবাদ আরো বৃদ্ধির আশাবাদ কৃষিবিভাগের। এদিকে আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালোর পাশাপাশি চাহীদা ও দাম ভালো থাকায় বাড়তি লাভের আশা কৃষকদের।
হিলির ছাতনি গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, সরিষা আবাদ করি কারন হলো এটি একটি বাড়তি ফসল সেই সাথে সরিষা চাষাবাদের ফলে পরিবারের যে তেলের চাহীদা সেটি পুরন হয় এর পাশাপাশি সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের জন্য পানির দাম দেওয়াসহ সার কিনতে পারি। বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬মন করে সরিষা পাওয়া যায় যা উপরি ফসল হিসেবে আমাদের কৃষকদের জন্য দারুন লাভজনক হয়। এবারে সরিষা বেশ ভালো রয়েছে বাজারে চাহীদা ও দাম ভালো রয়েছে তাতে করে আমরা এবারে আরো বেশী লাভবান হবো বলে আশা করছি।
সিদ্দিক হোসেন নামের অপর কৃষক বলেন, সাধারনত আমন ধান কর্তনের পরে বোরো ধান রোপনের আগ পর্যন্ত জমি পরেই থাকতো। এই সময়ে জমি ফেলে না রেখে তাতে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার চাষাবাদ করেছি। আর ধান কর্তনের পর সেই জমিতে দুটি চাষ দিয়ে তাতে সরিষা লাগানো যায় তাতে করে বিঘাপ্রতি আড়াই থেকে ৩হাজার মতো খরচ হয়। সরিষা চাষাবাদের ফলে আমন ও বোরো ধানের মাঝে উপরি ফসল পেয়ে আমাদের তো লাভ হবে। এর পাশাপাশি তেলের যে দাম তেল কিনতে অনে টাকাই লাগে সরিষা আবাদের ফলে পরিবারের যে তেলের চাহীদা সেটি পুরন হবে এর উপর গরুর খাওয়ার জন্য খৈল পাওয়া যায় তারপরে সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয় সেই আশাতেই সরিষার চাষাবাদ করেছি। আর সরিষা চাষাবাদে তেমন খরচ নেই বললেই চলে পানি সেচ সার তেমন লাগেনা। শুধু সরিষা লাগালেই হলো আর সরিষার ক্ষেত গরু ছাগলেও খায়না যার কারনে কোন চিন্তা করতে হয়না।
সুজন হোসেন বলেন, বাজারে সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য তেলের দাম বাড়ার কারনে গত মৌসুমেই সরিষার ব্যাপক চাহীদা যেমন ছিল তেমনি দাম গতবার প্রতিমন ৩হাজার থেকে ৩হাজার ২শ টাকার মতো দাম গেছে। এবারেও সরিষার ব্যাপক চাহীদা রয়েছে আল্লাহর রহমতে সরিষার গাছ বেশ ভালো হয়েছে। এখন কাটা মাড়াই শেষে বুঝা যাবে ফলন কেমন হয় আর দাম কেমন পাওয়া যায় তার উপর লাভ নির্ভর করবে। লাভের আশাতেই সরিষা চাষাবাদ করেছি তবে সরিষা চাষাবাদে কোন লোকশান তো নেই যার কারনেই সকলেই সরিষার চাষাবাদে ঝুকছেন।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড.মমতাজ সুলতানা বলেন, চলতি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ৮৩০ হেক্টর জমিতে।সেখানে ১ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। এর মুলকারন হলো এটি সম্প্রসারনের জন্য আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। সরকারিভাবে ৯৬০জন কৃষককে বীজ ও সার সহায়তা করা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রশিক্ষনে সরিষা চাষাবাদের গুনাবলি সর্ম্পকে কৃষকদের নিকট তুলে ধরেছি। এছাড়া যেহেতু তেল বাহির থেকে আমদানি করতে হয় যার দাম অনেক বেশী বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদেরকে সেটি বুঝানো হয়েছে। যার ফলে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠায় চলতি মৌসুমে বিস্তর এলাকাজুড়ে সরিষার চাষাবাদ সম্পুর্ন হয়েছে।আমরা আশাবাদি সামনের দিনে আরো সরিষার চাষাবাদ সম্প্রসারিত হবে সেই সাথে কৃষকরা লাভবান হবে।