যতই দিন গড়ছে ততোই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পেয়াজের বাজার। বন্দর দিয়ে পেয়াজের আমদানি বাড়লেও মাত্র দুদিনের ব্যবধানে হিলি স্থলবন্দরে পেয়াজের দাম বেড়েছে পাইকারীতে কেজি প্রতি ১০টাকা করে। দুদিন আগে বৃহস্পতিবার বন্দরে ইন্দোর জাতের পেয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫টাকা কেজি দরে যা রবিবার বন্দরে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬টাকা কেজি দরে, যা আজো একইদামে বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি দামে কিনতে হওয়ায় দেশের বাজারে পেয়াজের দাম বাড়ছে বলে দাবী বন্দরের আমদানিকারকদের। এদিকে দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরে পেয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা।
হিলি স্থলবন্দরে পেয়াজ কিনতে আসা পাইকার রফিকুল ইসলাম ও আইয়ুব হোসেন বলেন, গতবৃহস্পতিবারে বন্দর থেকে পেয়াজ ক্রয় করে নিয়ে গেলাম ৩৫টাকা কেজি দরে। আজ রবিবার বন্দরে পেয়াজ কিনতে এসে দাম শুনে হতবাক ৪৫ থেকে ৪৬টাকা কেজি লেগে গেছে পেয়াজের দাম। এখন আমরা কি দামে পেয়াজ কিনবো আর কি দামে বিক্রি করবো সেই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। বন্দরেই যে দাম চাচ্ছে মোকামে তো সেরকম দামে তো বিক্রি করতে পারবোনা এতে করে লাভ তো দুরে থাকলো পেয়াজ ক্রয় করে আমাদের লোকশান গুনতে হবে। তার উপর এতদামে পেয়াজ ক্রয় করে আবার যদি বাজার ফল্ট করে তাহলেতো আমাদেরকে মাঠে মারা যেতে হবে। প্রতিদিনই পেয়াজের দাম বাড়ছে এটি ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া কিছুই না তাই লোকশানের ভয়ে পেয়াজ না ক্রয় করে ফিরেই যাচ্ছি বাধ্য হয়ে। তবে কেউ কেউ বাড়তি দামেই পেয়াজ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।
হিলি স্থলবন্দরের পেয়াজ ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন ও রবিউল ইসলাম বলেন, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারনে পেয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়ে পেয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহ কমে ভারতের বাজারেই পেয়াজের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। এছাড়া পুজার কারনে বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ থাকবে যার কারনে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা ক্ষেত থেকে পেয়াজ উঠানো কমিয়ে দিয়েছেন তেমনি মোকামগুলোতে পেয়াজের লোডিং কমিয়ে দিয়েছেন যার কারনে চাহীদা মোতাবেক পেয়াজ না পাওয়ায় বন্দর দিয়ে কম পরিমানে পেয়াজ আমদানি হচ্ছে। এছাড়া সামনে দুর্গাপুজা একারনে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি ৬/৭দিন বন্ধ থাকবে। একইভাবে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ থাকবে। যার কারনে এসময়ে বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি যেমন বন্ধ থাকবে, তেমনি সরবরাহ কমে যাবে। এর কারনে দেশের বাজারে মোকামগুলোতে পেয়াজের বেশ চাহীদা পুর্বের তুলনায় বেড়েছে। যেখানে প্রতিদিন হিলি স্থলবন্দরে পেয়াজের প্রয়োজন ৫০ট্রাক পেয়াজ সেখানে বন্দর দিয়ে আসছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ট্রাক করে পেয়াজ। এদিকে বাজারে দেশীয় পেয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ও দাম বৃদ্ধির কারনে দেশের বাজারে আমদানিকৃত পেয়াজের যথেষ্ট চাহীদা তৈরি হওয়ায় দামের উপর প্রভাব পড়ছে। এছাড়া একসপ্তাহের বেশী সময় ধরে বন্দর বন্ধের কারনে পেয়াজ আমদানি বন্ধ থাকবে যার কারনে অনেক স্থানের পেয়াজ ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন যে পেয়াজ স্টক করে রেখে বিক্রি করতে যার কারনে আগে যেখানে তারা ১ ট্রাক করে পেয়াজ কিনেছেন এখন সেখানে ২ট্রাক করে পেয়াজ নিচ্ছেন এর কারনে দেশের বাজারে পেয়াজের চাহীদা বাড়ায় দামের উপর প্রভাব পড়ছে। গত বৃহস্পতিবার বন্দর দিয়ে আমদানি হলেও শুক্রবার ও শনিবার দুদিন বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধের কারনে পেয়াজের সরবরাহ কমায় দেশের বাজারে পেয়াজের চাহীদা আরো বেড়েছে। যার কারনে আজ রবিবার পেয়াজের দাম আরো বেড়েছে, পেয়াজ নিয়ে ঠিক যেন কাড়াকাড়ি এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।তবে পুজোর পরে এমন দাম থাকবেনা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন জাতের পেয়াজ উঠতে শুরু করেছে সেগুলো আসতে শুরু করবে এর উপর মোকামগুলোতে পেয়াজের লোডিং বাড়বে এতে করে বন্দর দিয়ে পেয়াজের আমদানি যেমন বাড়বে তেমনি দামের যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে সেটি কমে আসবে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে পেয়াজের আমদানি অন্যান্য দিনের চেয়ে আজকে একটু বেশী।রবিবার বন্দর দিয়ে ২৫টি ট্রাকে ৭১১টন পেয়াজ আমদানি হয়েছে। আজ সোমবার বন্দর দিয়ে পেয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। পেয়াজ যেহেতু কাচামাল ও পচনশীল দ্রব্য তাই এটি যেন দ্রুততার সহিত খালাস করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছানোর জন্য বন্দর কতৃপক্ষ সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করে রেখেছেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।