কুমিল্লার হোমনায় দক্ষিণ আফ্রিকা ও তার ভাইসহ ভগ্নিপতিকে ৩দিন থানায় আটকে রেখে শারিরিক নির্যাতন ও ২৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে হোমনা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, এএসআই মাসুদ রানাসহ তিন জনের নামে কুমিল্লা ৪নং আমলী আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২৭মার্চ সোমবার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সৌদি আরব প্রবাসী তাদের আরেক ভাই অপু মিয়া এ মামলা করেন।
মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ওমর ফারুক সহকারী পুলিশ সুপার (হোমনা সার্কেলকে) আগামী ২৪মে তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার মাথাভাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ফুল্লাকান্দি গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী মামলার বাদী অপু মিয়া পরিবারের জন্য কিছু স্বর্ণ নিজ নামে সৌদে থেকে ক্রয় করে বাংলাদেশ বিমান বন্দরে নিজের নামে শুল্ক পরিশোধ করে আনেন।
প্রবাসী অপু দেশে আসার পর থেকে মামলায় অভিযুক্ত ৩নং আসামী হোমনা সদরের আনোয়ারের সহযোগিতায় হোমনা থানা পুলিশের এএসআই মাসুদ রানা গত ১৯ তারিখ অপু মিয়াকে বাড়িতে খুঁজতে যায় এবং তাকে না পেয়ে তার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী ভাই ইউসুফ মিয়া ও ইট-বালি ব্যবসায়ী ইউনুস মিয়াকে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে হাতে হাত কড়া পড়িয়ে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ৩ দিন আটকে রেখে প্রচন্ড প্রহার করে।
এরপর ইউসুফ দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী কিনা জানতে চেয়ে কাগজ পত্র নিয়ে পরিবারের লোকজনকে থানায় আসতে বলে ওসি। পরে বাদীর ভগ্নিপতি রুবেল মিয়া কাগজপত্র নিয়ে থানায় গেলে তাকেও আটকে রাখে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম মোল্লার মধ্যস্থতায় স্বর্ণ ও ২৫ লাখ টাকা দিয়ে ঝামেলা মিট করার কথা বলে গত ২২ মার্চ বুধবার বিকেলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয়।
এসময় দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী ইউসুফের পাসপোর্ট, ভিসা ও একটি আর ওয়ান ফাইভ এম মোটরসাইকেল থানায় আটকে রাখেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
এদের ছাড়িয়ে আনার সময় নগদ ২ লাখ টাকা দেয়া হয় বলেও মামলায় অভিযোগ করেন।
মামলা পরিচালনাকারী এডভোকেট ইরফানুল ইসলাম জানান, “বাদীর দুই ভাইকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ৩ দিন থানায় আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে ২৫লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। টাকা না দিলে তাদের ক্ষতি করার হুমকিও দিয়েছেন ওসি। এর প্রেক্ষিতে আমার মক্কেল ৪নং আমলী আদালতে মামলা করলে, মামলাটি গ্রহণ করে হোমনা সার্কেলকে তদন্ত করে আগামী ২৪মে'র মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। মামলার সাথে হোমনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাপত্র দেওয়া হয়েছে।”
মামলার বাদী উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি মাথাভাঙ্গা গ্রামের অপু মিয়া জানান, “আমি বৈধভাবে রশিদের মাধ্যমে স্বর্ণ ক্রয় করে বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে শুল্ক পরিশোধ করে দেশে আনি। স্থানীয় থানার দালাল আনোয়ারের প্ররোচনায় ওসি সাইফুল ইসলাম ও এসআই মাসুদ রানা আমার সাউথ আফ্রিকা প্রবাসী ভাই ইউসুফ ও ব্যবসায়ী ভাই ইউনুসকে গত ১৯ তারিখ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় চোখ বেঁধে। থানায় ৩ দিন আটকে রেখে নির্যাতন করে ২৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং তিন দিনের মধ্যে হুমকি দিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে ছাড়ে। আমার ভাইয়ের পাসপোর্ট ও মোটরসাইকেল থানায় আটকে রাখে। এই ঘটনায় আমি ওসি সাইফুল ইসলাম, এএসআই মাসুদ রানা ও হোমনা সদরের আনোয়ারের নামে মামলা করেছি।"
এদিকে ওসির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শুনে একাধিক ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের স্মরণাপন্ন হয় এবং ওসি ও কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। মাথাভাঙা ইউনিয়নের ছয়ফুল্লাকান্দি (পঞ্চবটি) এলাকার শহিদুল্লাহ, দিদার খান ও রুপ জানান, একটি ঘটনাকে ইস্যু করে তাদের ৪জনকে রাত ২টার দিকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে একজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা ও মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেন।
অন্যদিকে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলামকে রাতে ধরে নিয়ে ৭০ হাজার টাকা রেখে ছেড়ে দেন। এছাড়াও জয়পুর ইউনিয়নের অনন্তপুর কান্দাপাড়ার ধনু মিয়ার ছেলে মাইনুদ্দিনকে থানায় নিয়ে প্রচন্ড নির্যাতন করে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়া হয়। পরে ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন হোমনা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি পঞ্চবটির ঘটনায় একজনকে হয়রানীর কারণে রাতে ধরে নিয়ে মুচলেকা রেখে ছেড়েছেন এবং প্রবাসীদের বিষয়ে বলেন, “একজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের থানায় ডেকে আনা হয়েছিল। তারা প্রতারক, তারা ২৭ লক্ষ টাকার স্বর্ণ আত্মসাৎ করেছে। তাদের কোন মারধর করা হয়নি। তিন দিন থানায় আটকে রাখার বিষয়টি সত্যি নয়। সাউথ আফ্রিকার প্রবাসীর পাসপোর্ট জিম্মাদারের উপস্থিতিতে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের অভিযোগ হলে কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে।”
হোমনা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর মুহসীন মাসুদ রানা সাংবাদিকদের জানান, “উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এই মামলা করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের থানায় ডেকে আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। থানায় তাদের তিন দিন আটকে রাখা হয়নি কিংবা মারধরও করা হয়নি। শুনেছি আদালতে তারা মামলা করেছে এবং তদন্তের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে।”