আগে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে বড় সংগ্রহ দাঁড় করালো বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান-লিটন দাসের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরিতে পাওয়া ১৭৩ রানের স্কোরে জয়ের স্বপ্ন দেখাই স্বাভাবিক। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজে জয়টা অধরাই থাকলো বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচেও হারের তিক্ততা পেলো সাকিবরা। এবারের হার ৭ উইকেটে।
আজ (বৃহস্পতিবার) ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ, সাকিব-লিটনের ঝড়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে করে ১৭৩ রান। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে মোহাম্মদ নওয়াজের ঝড়ো ইনিংসে ১ বল আগে ৩ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান।
ভাঙাই যাচ্ছিল না পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি। বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে ঝরছিল রানের বৃষ্টি। অবশেষে তাদের জুটি ভাঙলেন হাসান মাহমুদ। শুধু বাবরকে ফেরালেন না, একই ওভারে প্যাভিলিয়নের পথ দেখালেন ওয়ান ডাউনে নামা হায়দার আলীকেও।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে নতুন ধারা যোগ করেছেন বাবর-রিজওয়ান। উইকেট ধরে রেখে রান বাড়িয়ে নেওয়ার কাজটা প্রায় ম্যাচেই করে যাচ্ছেন তারা। বাংলাদেশ ম্যাচেও ব্যতিক্রম হলো না। কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই তারা এনে দেন ১০০ ছাড়ানো স্কোর। হাসান মাহমুদের বলে যখন বাবর আউট হলেন, পাকিস্তানের রান তখন ১০১।
বদলি ফিল্ডার মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ধরা পড়ার আগে অবশ্য পাকিস্তান অধিনায়ক তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। ৪০ বলে ৯ বাউন্ডারিতে খেলেন ৫৫ রানের ইনিংস।
তাতে উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশ ২ বল পর আবারও উইকেট উদযাপন করে। সেই হাসান মাহমুদই এনে দেন দ্বিতীয় উইকেট। ওয়ান ডাউনে নামা হায়দারকে রানের খাতাই খুলতে দেননি বাংলাদেশি পেসার। ক্লিন বোল্ড করে তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান।
জোড়া আঘাতে নতুন করে আশার আলো দেখতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু রিজওয়ানের বীরত্বে হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। পাকিস্তানি উইকেটকিপার ব্যাটার আউট হয়েছেন, তবে তখন জয় থেকে সামান্য দূরে পাকিস্তান। সৌম্য সরকারের চমৎকার ওভারে ৬৯ রানে বিদায় নেন রিজওয়ান। নাজমুল হোসেন শান্তর তালুবন্দি হওয়ার আগে ৫৬ বলে ৪ বাউন্ডারিতে করেন ৬৯ রান। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ের পুরস্কার হিসেবে ম্যাচসেরা হয়েছেন রিজওয়ান।
তিনি সিঙ্গেলস-ডাবলসের ওপর ভর করে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন, আর অন্যপ্রান্তে থাকা নওয়াজ ছিলেন আগ্রাসী। চার নম্বরে নেমে বাঁহাতি ব্যাটার ২০ বলে অপরাজিত ৪৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ঝড়ো ইনিংসটি তিনি সাজান ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়। নওয়াজের সঙ্গে ২ রানে অপরাজিত ছিলেন আসিফ আলী।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার হাসান মাহমুদ। এই পেসার ৪ ওভারে মাত্র ২৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। পাকিস্তানের হারানো অন্য উইকেটটি সৌম্যর।
এর আগে ব্যাটিংয়ে অন্য এক বাংলাদেশের ছবি ফুটে ওঠে। ওপেনিংয়ের ব্যর্থতা কাটেনি। সৌম্য সরকার-নাজমুল হোসেন শান্ত জুটিরও একই পরিণতি। তবে সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস যেভাবে ব্যাট করলেন, তাতে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে দারুণ কিছুরই প্রতিশ্রুতি মিললো। এই দুজনের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৭৩ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন সাকিব-লিটন দুজনই। ওয়ান ডাউনে নেমে লিটন ৪২ বলে করেছেন ৬৯ রান। অন্যদিকে চারে নামা সাকিব ৪২ বলে খেলেন ৬৮ রানের ঝড়ো ইনিংস।
পরের দিকের ব্যাটাররা অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি। আফিফ ১১ রান করে ফেরার পর ১ রানে বিদায় নেন ইয়াসির আলী। আর নুরুল হাসান সোহান ২* রানে ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১* রানে অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল বোলার নাসিম শাহ। এই পেসার ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। তার মতো ২ উইকেট নিতে মোহাম্মদ ওয়াসিমের খরচ ৩৩ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭৩/৬ (লিটন ৬৯, সাকিব ৬৮, শান্ত ১২, আফিফ ১১, সৌম্য ৪; নাসিম ২/২৭, ওয়াসিম ২/৩৩)।
পাকিস্তান: ১৯.৫ ওভারে ১৭৭/৩ (রিজওয়ান ৬৯, বাবর ৫৫, নওয়াজ ৪৫*, আসিফ ২*; হাসান মাহমুদ ২/২৭, সৌম্য ১/৬)।
ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ রিজওয়ান।