পঞ্চগড় প্রতিনিধি।।
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ের আখানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ দেবীডাঙ্গা গ্রামের সহিদুল ইসলাম ও মর্জিনা বেগম দম্পতির বড় ছেলে মতিউর রহমান (৩৬)। সে সময় থেকে ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়ে বাবা-মা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খোঁজার পরেও না পেয়ে ওই বছরেই ঠাকুরগাঁও থানায় নিখোঁজ ডায়েরী করে বাবা শহিদুল ইসলাম। ১৪ বছর বয়সে মা-বাবার বুক শূন্য করে হারিয়ে যাওয়া মতিউর ভারতের ‘শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের’ মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরেছেন। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মা-বাবার বুকে মতিউর ফিরে আসায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা-বাবা সহ পরিবারের সদস্যরা।
শুক্রবার (২১ জুলাই) দুপুরে উভয় দেশের আইনি ও ইমিগ্রেসন প্রক্রিয়া শেষে মতিউরকে দিতে আসে ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী। এর আগে তাকে গ্রহণ করতে সকাল থেকে মতিউরের মা-বাবা, বোন ও স্বজনেরা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শূন্যরেখায় আসেন। তবে মতিউর কবে, কীভাবে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন, সেই জট এখনো খোলেনি।
জানা যায়, গত ২০০২ সালে হারিয়ে যাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে মতিউরের পরিবার। এরপর করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে আসার পর আহমেদাবাদের বেসরকারি সংস্থা ‘স্নেহালয়’ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গত ৮ মাসে আগে নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টে যোগাযোগ করে শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন। নিজ দেশের মাটিতে পা রেখেই মতিউর বলেন, কিভাবে ভারতে এসেছি তা জানি না। তবে দীর্ঘ ২১ বছর পর নিজ দেশে এসেছি। খুব ইচ্ছে নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার।
এদিকে মতিউরকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিলে, ভারতের ‘শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের’ মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছর পর নিখোঁজ ছেলেকে সুস্থ্য ভাবে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন মা-বাবা। একই সাথে উভয় দেশের সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানান তারা। মা মর্জিনা বেগম ও বাবা সহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলাম। একসময় ছেলের বাড়ি ফিরবে। আল্লাহর কাছে আমরা অনেক কেদেছি। তাকে সুস্থ্য ভাবে যেন আমাদের বুকে ফিরিয়ে দেন। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।
এসময় কথা হয় শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের সমাজকর্মী নীতিশ শর্মার সাথে। তিনি বলেন, ভারতের মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকার রাস্তা থেকে মতিউর রহমানকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার পর জানতে পারি, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও। বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে আজকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে অনেক আনন্দিত। প্রথমবারের মতো আমরা ভিনদেশের কাউকে ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছি।
ঠাকুরগাঁও এর আখানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমান বাদশা বলেন, মানবাধীকার কর্মীরা এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তারা রাস্তা থেকে মতিউরকে উদ্ধার করে সুস্থ্য করে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। যখন আমরা গত ৮ মাসে আগে তার খবর পেয়েছিলাম, তখন থেকে তার পরিবারসহ পুরো এলাকা তাকে দেখতে অপেক্ষায় রয়েছিল। আজ সেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেসনের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) খায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ভারতীয় ইমিগ্রেসন পুলিশের সকল প্রক্রিয়া শেষে গ্রহণ করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।
এসকেডি/অননিউজ
প্রধান সম্পাদক: হুমায়ুন কবির রনি
মোবাইল: ০১৭১৬-৫৩০৫১৪
ইমেইল: onnews24@gmail.com
www.onnews24.com