রাজনীতিতে নৈরাজ্য, ধারাবাহিক খুন আর দুর্নীতি রুখতেই বাকশাল গঠন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দ্বিতীয় বিপ্লব নামে পরিচিত এটিকে শোষিতের গণতন্ত্রও বলা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাকশাল লুপ্ত হলেও এর আদর্শিক মূল্য এখনও অমলিন। শ্রেণি শত্রু খতমের নামে রাজনীতিবিদদের লাগাতার হত্যা সদ্য স্বাধীন দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল।
একশ্রেণির আমলা, পাকিস্তানী দোসর আর বিদেশি এজেন্ট মিলে শেখ মুজিবের শাসনকে বিতর্কিত করতে যারপরনাই উঠেপড়ে লেগেছিল। এমন পরিস্থিতিতে কৃষিনির্ভর আধা সামন্ত সামাজিক অবস্থা থেকে শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তাই গঠন হয়েছিল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল। বাকশাল কোনো অগণতান্ত্রিক বা একনায়কতান্ত্রিক শাসন ছিল না। কিন্তু বহুভাবে বাকশালের ধারণাটিকে বিতর্কিত করে তুলেছিল বিশেষ একটি শ্রেণি।
বিশিষ্ট রাজনীতিক, প্রগতিশীল লেখক ও বুদ্ধিজীবী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনকাল চীরস্থায়ী করার জন্যই এটা করেছিলেন, এই অপপ্রচারটা মানুষের মনে ভিত্তি পেল। তবে, তিনি এটা রাষ্ট্র পরিচালনার শাসন পদ্ধতি হিসেবে এটা করেছিলেন তা নয়। এটার সঙ্গে অর্থনীতির অনেকগুলো বিষয় জড়িত ছিল। কিন্তু তিনি সেগুলো ব্যাখ্যা করে যেতে পারেননি। শুধু একটা বলেছিলেন যে, আমি বহুমুখী সমবায় করবো এবং সমস্ত জমি সমবায়ের ভেতরে থাকবে। জমির মালিক একাংশ পাবে আর যে শ্রম দেয় সে একাংশ পাবে, আরেকাংশ রাষ্ট্র পাবে। এইভাবে সমস্ত গ্রামগুলোকে সমবায়ের ভিত্তিতে সাজিয়ে নিতে পারি তাহলে আমরা সামনের দিকে প্রগতির পথে অগ্রসর হতে পারবো।”
বাকশাল ছিল উন্নত বাংলাদেশ গড়ার শক্তিশালী প্ল্যাটফরম-অভিমত বর্ষিয়ান রাজনীতিকের। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “বাকশাল যখন করলেন সম্ভবত সময়টা পার হয়ে গেছে, অনেক দেরি করে ফেলছেন। দ্বিতীয় সবদিক সামাল দিতে গিয়ে যে পদ্ধতিতে তিনি করলেন সেটা মানুষের ভেতর আরও কনফিউশন বাড়িয়ে দিল। মুক্তিযুদ্ধের পর পরই এই পথে আমাদের যাত্রা শুরু করার পর পাকিস্তানের আবর্জনা পরিষ্কার করে আমরা যদি পার্লামেন্টে ডেমোক্রেসি সিস্টেমের মধ্যে যেতাম।”
১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি গঠন করা বাকশালের মাধ্যমে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ কর্মসূচি নিলেও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার মধ্য দিয়ে অল্পদিনেই এ মতবাদ ম্লান হয়ে যায়। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডটি একটি পার্সনাল হত্যা ছিল না, একজন আঁততায়ী এক ব্যক্তি হত্যা করলো এরকম তো নয়। যদি তাই হতো তাহলে যে নীতিতে দেশ চলছিল সেটাই অব্যাহত থাকার কথা ছিল। কিন্তু হত্যা করার পরপরই আমাদের সংবিধান থেকে শুরু করে সমস্ত মূলনীতিগুলোকে সম্পূর্ণ বাতিল করে উল্টো পথে দেশ চালান শুরু হল। সুতরাং কোনটার উপলক্ষে কোনটা করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে হবে সেই কারণে নীতি বদল করা হয়েছে নাকি নীতি বদল করতে হবে এজন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে।
এসকেডি/অননিউজ