দোকানই ঘর বৃদ্ধ দম্পতি’র ঠাঁই
জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, কুষ্টিয়া।।
বয়সের ভারে ভালোবাসার সংসার হারালেও প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে দোকানঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বৃদ্ধ নূর আলী খাঁ (৮০)। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুন্ডি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নূর আলীর চার মেয়ে ও দুই ছেলে থাকলেও তাঁদের ঘরে ঠাঁই হয়নি। দোকানে প্রতিদিন যা বিক্রি হয়, তাতে তাঁদের সংসারও চলে না। ফলে অন্যান্য চাহিদা মেটাতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন স্ত্রী সুফিয়া খাতুনকে (৭৪) নিয়ে।
শুধু তা-ই নয়, এ বৃদ্ধ দম্পতি শৌচাগার, টিউবওয়েল, খাদ্য ও বস্ত্রের অভাবে সীমাহীন কষ্ট করছেন। কিন্তু তাদের ছেলেরা খোঁজও নেন না। তবুও সন্তানদের বিরুদ্ধে নেই কোনো অভিযোগ।
সরেজমিন দেখা যায়, দোকানের মেঝেতে সুফিয়া খাতুন শুয়ে কাতরাচ্ছেন। নূর আলী তাঁর সেবা করছেন। একই সঙ্গে দোকানে বিক্রিও করছেন। দোকানে সীমিত পরিমাণে চানাচুর, বিস্কুট, পাউরুটি, কয়েল, সাবান, শ্যাম্পু, লবণ, ডালসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস রয়েছে। সব মিলিয়ে আনুমানিক দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার পণ্য আছে সে খানে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার জিনিস বিক্রি হয়। এতে লাভ হয় ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এ লাভের টাকায় সংসার চলে না। ওষুধ কেনার টাকাও হয় না।
বৃদ্ধ দম্পতির ছেলে মাহাতাব উদ্দিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানান।
নূর আলী বলেন, ‘আমার স্ত্রী অনেক বছর থেকে অসুস্থ। প্রথম দিকে চিকিৎসা চালিয়েছিলাম। পরে টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে না পারায় সে ছয় বছর ধরে পঙ্গু, একা একা চলাচল করতে পারে না। আমিও নানা রোগ ও বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। আমরা টাকার অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করি। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শুনি সরকার মানুষকে ঘর তুলে দেয়, কতজনকে কত কিছু দেয়। আজ পর্যন্ত চেয়ারম্যান-মেম্বাররা একটা কার্ড করে দিল না আমাদের। অনেক আগে আমি একবার পেয়েছিলাম কিন্তু বুড়িডা কোনো দিনই কিছু পায়নি।
খলিশাকুÐি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলমত হোসেন জানান, বৃদ্ধ দম্পতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম বিন জামান বলেন, আমি এবারের নবনির্বাচিত সদস্য। সরকারি বিধিমোতাবেক বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেব। দুই এক দিনের মধ্যে কিছু সাহায্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।