সপ্তাহের ব্যবধানে হিলিতে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮ থেকে ১০টাকা
হিলি প্রতিনিধি
দিনাজপুরের হিলিতে হঠাৎ করেই আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে চালের বাজার। রমজানের ভেতরেও সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা করে। আর মোটা চালে বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩টাকা করে। হঠাৎ করে চালের এমন দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। চালের দাম বাড়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে দাম কমানোর দাবী জানান। চাল আমদানি বন্ধের সুযোগে অসাধু অটো মিল মালিকরা চাল মজুত করে দাম বাড়িয়েছেন বলে দাবী খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের।
সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে প্রতিটি চালের দোকানেই পর্যাপ্ত চালের মজুদ রয়েছে তারপরেও দিন দিন চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিনিকেট জাতের চাল পুর্বে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা থেকে বেড়ে ৬২টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, এছাড়া শম্পাকাটারি জাতের চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা থেকে বেড়ে ৬৪ থেকে ৬৫টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, আর স্বর্না-৫ জাতের চাল ৪০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে তা থেকে বেড়ে ৪২টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, দেশে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে দাম নিয়ন্ত্রনে সরকার বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেয়। একইসাথে চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ২৫.৭৫ভাগ নির্ধারন করে সরকার। এর ফলে চার মাস পর গতবছরের ২৪আগষ্ট বন্দর দিয়ে পুনরায় চাল আমদানি শুরু হয়। এর আগে বাড়তি আমদানি শুল্কের কারনে ওই বছরের ৩০এপ্রিল থেকে চাল আমদানি বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমুল্য নিশ্চিতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে পুর্বের মতো ৬২.৫ভাগ নির্ধারন করে সরকার এর ফলে ৩০অক্টোবর থেকে পুনরায় বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।
হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষজন আমাদের তো আয় রোজগার তেমন না কিন্তু যেভাবে চালের দাম বাড়ছে তাতে করে আমাদের চলা তো মুশকিল হয়ে পড়েছে। যে চিকন চাল কয়েকদিন আগে কিনলাম ৫৫/৫৬টাকা কেজি দরে এখন সেই চাল হয়ে গেছে ৬০ থেকে ৬২টাকা। কয়েকদিনের ব্যবধানে চালের দাম এমনভাবে বাড়লে আমরা কিভাবে বাচবো বলেন। একেতো রমজানের বাড়তি খরচ মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের সবসময় চাল কিনে খেতে হয় দাম বাড়ায় আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে চালের দামটা কমলে আমাদের মত মানুষদের জন্য একটু ভালো হয়।
অপর চাল ক্রেতা আব্দুল ওয়ারেছ বলেন,আগে যেখানে আমরা চাল কিনতাম ২০ কেজি করে এখন সেখানে চাল কিনছি ৫ কেজি করে। এর মুল কারন হলো চালের দাম বেড়ে গেছে যাতে করে আমাদের মত সাধারন মানুষদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এখন চিকন চাল ৬০ থেকে ৬৫টাকা হয়ে গেছে এমন দামে কিভাবে সাধারন মানুষ চাল কিনে খাবে। আগে যখন দাম কম ছিলো তখন মানুষ চাল কিনে ভালোভাবে খেতে পাচ্ছিলো এখন তো সেটি হচ্ছেনা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছে তাই সরকারের উচিৎ এগুলো নিয়ন্ত্রনের মধ্যে নিয়ে দাম কমানো তবে আমাদের জন্য ভালো হবে।
অপর চাল ক্রেতা মজিবর রহমান বলেন, চাল নিয়ে তো বিপাকের মধ্যে পড়ে গেছি আমরা যেদিনই চাল কিনতে আসছি সেদিনই দেখছি চালের দাম বাড়তি প্রতিদিন যেন চালের দাম বাড়তেই আছে। আজকে একদামে কিনে নিয়ে যাচ্ছি আবারো কিনতে এসে বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। এতে করে আমাদের তো চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে আমাদের তো আর আয় সেবাবে বাড়ছেনা। আমরা নিন্ম মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষজন আমাদের তো সমস্যা বাড়ছেই। একেতো আমাদের আয় বাড়েনি অপরদিকে সরকারের ওএমএসের লাইনে দাড়িয়ে চাল নিতেও পারছিনা লোকলজ্জার ভয়ে যার কারনে আমাদের মতো মানুষদের চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
হিলি বাজারের চাল বিক্রেতা সুব্রত কুন্ডু বলেন, চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারন অটোমিলারদের কারসাজি। তারা যেই দেখেছে সরকার ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দিয়ে সেই সুযোগে তারা চাল মজুদ করে তাদের নিজের ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে দাম নিচ্ছে। এখন তো আর কোন ধান কৃষকের কাছে নেই সব ধান চলে গেছে অটো মিলারদের কাছে। যার কারনে এখন অটো মিলাররা যা করতিছে এখন সেটাই হচ্ছে। আমরা ধরেই নিলাম একমন ধান তারা এগারোশ টাকায় কিনলো একমন ধানে ২৭কেজি চাল হয় সে হিসেব মোতাবেক চালের পড়তা ৪৫ থেকে ৪৮টাকা উদ্ধ হলে ৫০টাকা হবে। যদিও মিলারদের কাছে এসব ধান তো আগের কম দামে কেনা ধান। কিন্তু ওই চাল অটোমিলাররা বিক্রি করছে ৬০টাকা কেজি দরে। আর তাদের কাছ থেকে ওই দামে ক্রয় করে পরিবহন খরচসহ খুচরা বাজারে ৬৩/৬৪টাকা বিক্রি করতেই হবে। যার কারনে চালের দাম আরো বাড়বে বিশেষ করে ঈদের পর দাম বাড়তি হবে যতদিন না নতুন ধান আসছে সে পর্যন্ত চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে আসবেনা। তাই এখন সরকারের উচিৎ চাল আমদানির অনুমতি দিয়ে চাল আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়ে জনগনকে বাচানো।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে সর্বশেষ গত ফেব্রæয়ারী মাসে বন্দর দিয়ে মাত্র ৩৬টন চাল আমদানি হয়েছিল। চালের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে মুলত এর পর থেকেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি সম্পুর্ন রুপে বন্ধ রয়েছে। বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আহরনে যেমন বিঘœ ঘটছে তেমনি বন্দর কতৃপক্ষের দৈনন্দিন আয় কমেছে অপরদিকে শ্রমিকদের আয় কমায় তারাও বিপাকে পড়েছেন।