নীলফামারীতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ
সুভাষ বিশ্বাস, নীলফামারী।।
নীলফামারী সদর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে নিয়ম আর নীতিমালাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নানা অনৈতিক কর্মকান্ডকে সমর্থন করায় ও অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে, আর এসব কর্মে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে কাজ করছে অফিসের পরিচিত এক শ্রেণীর দালাল।
সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এর কিছু কর্মকান্ড এসব প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নগর দারোয়ানী মোল্লাপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাতে কাগজে-কলমে ছাত্র-ছাত্রী সাজানো থাকলেও বাস্তবে মাদ্রাসাতে একটিও ছাত্র ছাত্রী নেই, হয়না কোন পাঠদান, জাল দলিলের জমি দেখিয়ে নিবন্ধন, শিক্ষক নিয়োগে করা হয়েছে আত্মীয়করণ। কথিত জমিদাতা পরিবারের তিন জন সদস্য ইতিমধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন। তার বিপরীত পদগুলোতে হয়েছে বাণিজ্য, জাতীয় করনের জন্য মোল্লাপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাটির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকার পরেও সেসব তদন্ত না করে এক শ্রেণীর দালাল, অসাধু কর্মচারী কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই এমপিও ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করায়, প্রশ্ন উঠেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে নগদ দারোয়ানী মোল্লাপাড়া একরামিয়া মাদ্রাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদুল হক শাহ বলেন দারোয়ানী মোল্লাপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য একাধিকবার জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসিলেন্ট সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও একটা তদন্ত করাতে পারি নাই। আমার একরামিয়া মাদ্রাসার জমির জাল ফটোকপি দিয়ে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার নিবন্ধন নিয়েছে এত বড় একটা জালিয়াতি হওয়ার পরেও শিক্ষা কর্মকর্তারা চুপ রয়েছে। এক্ষেত্রে বুঝতে আমাদের অসুবিধা হয়না যে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ওই পক্ষকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার কথিত জমিদাতা সোফিয়ার রহমান জানান, সরকার থাকি হামাক কার্যক্রম করার অনুমতি দিলে আমি জমি লিখে দেবো। তার পরিবারের তিন সদস্যের চাকুরীর বিষয়টি এড়িয়ে যান। মাদরাসায় ছাত্র না থাকার বিষয়ে বলেন, হামার এইঠে প্রাইমারী, মাধ্যমিক স্কুল আছে ৩/৪টা, ছাত্র চলি গেছে।
অপর দিকে গত ১৫ জুন উত্তরা শশী উচ্চ বিদ্যালয় এর ৬টি পদে অতি গোপনে নীলফামারী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিকাল ৩টায় নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান শিক্ষক, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা কর্মী, নৈশ প্রহরী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী। প্রধান শিক্ষক পদে মোঃ রবিউল ইসলাম এর বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে দুই বছর বরখাস্ত থাকা (২০১৩/২০১৫) অভিযোগ থাকার পরেও মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক পদে মোঃ রবিউল ইসলামকে চূড়ান্ত করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আলী শাহ রিয়ার, ডিজি প্রতিনিধি মোঃ আব্দুল মতিন ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এ নিয়োগ চূড়ান্ত করেন। এরপর দিন ১৬ জুন স্থানীয় অভিভাবক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উত্তরা শশী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে পুনরায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে।
শিক্ষক মোঃ মুক্তার হোসেন জানান, ম্যানেজিং কমিটি আর কোন শিক্ষক খুঁজে পেলেন না এরকম একটি ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় আমরা কি ভাবতে পারি মোটা অংকের অর্থ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে এ নিয়োগ কখনোই হতে পারেনা।
এই বিষয়ে সদর উপজেলা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী শাহরিয়ার বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক সাজাপ্রাপ্ত বা শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধী নয় এ বিবেচনায় তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জেলা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমি শুনেছি প্রয়োজনীয় কাগজ হাতে পেলে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ দিবো।
উল্লেখ থাকে যে, অতিগোপনে নীলফামারী ও সৈয়দপুরের রাজ্জাকীয়া গফুরীয়া মাদ্রাসা, আইস ঢাল মাদ্রাসা, পোড়াহাট আলিম মাদ্রাসা, আসমতিয়া দাখিল মাদ্রাসাকে কেন্দ্র বানিয়ে অবাধে গোপন শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের বানিজ্য করে আসছে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, কর্মচারী, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি ও সুপার/প্রধান শিক্ষকেরা। এছাড়াও নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসের গোপন কক্ষে পশ্চিম চাপড়া আলিম মাদ্রাসার একটি পদে নিয়োগ দেওয়ার পর মাদ্রাসা সুপার দিনের আলোতে মাদ্রাসায় প্রবেশ করতে পাচ্ছেন না। নীলফামারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গোপন কক্ষে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকসহ আরো ৪টি পদে নিয়োগ প্রশ্ন বৃদ্ধ করে তুলেছে জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের।