নীলফামারীতে চলাচলের রাস্তায় বন্ধ দূর্ভোগে শতাধিক পরিবার
সুভাষ বিশ্বাস,নীলফামারী
নীলফামারীতে স্থানীয় প্রভাবশালী কর্তৃক জোরপূর্বক চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রায় দুইশত পরিবারকে। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলা সংগলশী ইউনিয়নের ঢেলাপীর হাট সংলগ্ন কাদিখোল গ্রামে। রাস্তায় বেড়া দিয়ে বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে ওই এলাকার আবু হান্নান চৌধুরীর স্ত্রী রিনা আক্তার চৌধুরী ও তার মেয়ে হাসনাহেনা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বর্তমানে যাতায়াতের ওই রাস্তা বন্ধ করায় এলাকার দুইশত পরিবার সহ রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী হাজারো মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় চলাচলের রাস্তার উপর দেওয়া হয়েছে বাশের বেড়া। সংবাদকর্মীদের দেখে ছুটে আসে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী পরিবারের সদস্যরা। তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান,‘ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। হঠাৎ করে আবু হান্নান চৌধুরী তার স্ত্রী রিনা আক্তার চৌধুরী ও মেয়ে হাসনাহেনা চৌধুরী দিয়ে ওই রাস্তার উপর বেড়া লাগিয়ে দেয়। বেড়া লাগাতে বাধা দিলে তারা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকে এবং ধারালো অস্ত্র রাম দা দেখিয়ে বলে কাজে বাধা দিতে আসলে মাথা কেটে ফেলে দেবো। স্থানীয় চেয়ারম্যান এই বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারে নি। কারণ তারা কারো কথা শুনতে চায় না।’
সংবাদকর্মীদের দেখে লাঠি ভর দিয়ে ছুটে এসে ওই এলাকার ৭০বছর বয়সি আলেফা বেগম বলেন,‘ দেখেন বাবা আস্তা দিয়া যাবার জায়গা নাই। রাস্তার উপরোত বেড়া দিছে। এলায় যদি মোক এলা হাসপাতাল ধরি যাবার নাগে মোক নিগিবারো যায়গা নাই। মুই মইলে মরার খাট খান যে নিগাইবে সেই রাস্তাও নাই। তোমরা হামার রাস্তাটা ঠিক করি দেও।’
ওই এলাকার মজির উদ্দিন (৭০) বলেন,‘বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। ম্যাপে এটি রাস্তা হিসেবে দেখানো আছে। কিন্তু তারা এসব কিছুই মানতে চায় না। কেউ রাস্তার বিষয়ে কথা বলতে গেলেই তারা দা বটি নিয়ে বের হয়ে আসে।তাই ভয়ে কেউ কথা বলতে যায় না তাদের সাথে। এই রাস্তা বন্ধ হওয়ায় আমাদের চরম দূর্দশা সৃষ্টি হয়েছে। একটা সাইকেল নিয়ে যাওয়ার যায়গা নেই।’
ওই এলাকার গোলাম মোস্তফা বলেন,‘রাস্তার উপর বেড়া লাগায় আবু হান্নান চৌধুরীর স্ত্রী রিনা আক্তার চৌধুরী ও তার মেয়ে হাসনাহেনা চৌধুরী। মেয়েদের দিয়ে তিনি রাস্তার মধ্যে বেড়া লাগিয়েছে কারণ বেড়া দিতে কেউ বাধা দিলে মেয়েদের সাথে নিয়ে শ্লীলতাহানির মামলা দিবে। কিন্তু কেউ সেখানে বাধা দিতে যাওয়া তো দূরের কথা মা ও মেয়ে নিজেই রাম দা নিয়ে বের হয়ে এসে বেড়া লাগাইছে। তাই ভয়ে কেউ তাদের বাধা দিতে পারে নি। তাছাড়া হাসনাহেনা চৌধুরীর স্বামী পুলিমের এস.আই হওয়ায় তারা সবাই আমাদের পুলিশের ভয় দেখায়। আমরা নিরুপায় হয় গেছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর একটি সুষ্ঠু বিচার চাই।’
হাসনাহেনার চৌধুরীর চাচা হাসানুর রহমান চৌধুরী বলেন,‘জমিদারি আমল থেকেই সেটি ছিল চলাচলের রাস্তা এবং যারা জমিদাতা ছিল তারাও যখন জমি বিক্রি করে তখন দলিলে ওই রাস্তাটি চলাচলের রাস্তা বলে উল্লেখ করে দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে কি হলো জানি না। আমি এ বিষয়ে তাদের কিছু বলতে গেলেই তারা এখন আবার আমাকে তাদের প্রতিপক্ষ মনে করবে। তাই আমি কিছু বলি না তাদের।’
জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন,‘আমি কোনো লিখিত অভিযোগ পাই নি। লিখিত অভিযোগ পেলেই অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’