ঠাকুরগাঁওয়ে উঁচু জমিতে আমন ধান চাষে একমাত্র ভরসা সেচ প্রকল্প
আকাশ রহমান,ঠাকুরগাঁও।।
দেশের উত্তর জনপদে ঠাকুরগাঁও জেলা টি হিমালয়ের মানসকন্যা নামে পরিচিতি। কৃষিতে সমৃদ্ধিশালী এই জেলাটি প্রধানত ধান, গম, ভুট্টা সহ কৃষি ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও জেলার গুরুত্ব অপরিসীম।
কৃষি অফিস সূত্র মতে এই জেলা সদরে প্রায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়। আমন মৌসুমে সাধারণত বর্ষা কাল, বর্ষা কাল হওয়ায় আকাশের বৃষ্টি দিয়ে আমন ধানের চাষ করে থাকে এই অঞ্চলের কৃষক।
আকাশের বৃষ্টির পরও কিছু কিছু উচু অঞ্চল রয়েছে যেখানে ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে পানি সেচ দিয়ে আমন ধানের চারা রোপণ করতে হতো কৃষককে। কৃষকের কথা চিন্তা করে ১৯৯০ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় টাংগন নদীর টাংগন সেচ প্রকল্প ও শুক নদীর উপর বুড়ী বাঁধ দুটি সেচ প্রকল্প স্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকার। এই দুটো সেচ প্রকল্পকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য বর্তমান সরকার প্রায় দুই শত ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্ণসংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং কাজও চলমান।
তবে এ বছর আমন মৌসুমে এক দিকে জ্বালানির মূল্য উর্ধগতি অপর দিকে অনাবৃষ্টির কারণে এই এলাকার অধিকাংশ কৃষক বিপাকে পরছিল। উঁচু জমিতে আমন চাষিদের একমাত্র ভরসা সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের পানি। সরেজমিনে দেখা যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৪ নং রাজাগাঁও ইউনিয়নে টাংগন ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের দুটি ও ৩ নং আকচা ইউনিয়নে শুক নদীর বুড়ী বাঁধ সেচ প্রকল্পের দুটি ক্যানেল দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়েছে এবং সেই উঁচু অঞ্চলের কৃষকদের চাহিদা মত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
টাংগন সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সেচ দিয়ে আমন ধানের চারা রোপণ করার সময় কথা হলো খড়ি বাড়ি এলাকার কৃষক ফখরুল ইসলামের। এ বছর দেরিতে আমন ধানের চারা রোপণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এলাকাটা উচু অল্প বৃষ্টিতে এই অঞ্চলে পানি থাকে না আর এ বছর তো অনাবৃষ্টি আর অনাবৃষ্টির কারণে টাংগন ব্যারেজের সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের পানি দেরীতে পাইলাম। তাই এখন ক্যানেলের পানি দিয়ে আমন ধানের চারা রোপণ করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা এই গ্রামের প্রায় ১৫০ জন কৃষক ক্যানেলের পানি দিয়ে আমন চাষ করি এই সেচ প্রকল্পটি আমাদের অনেক উপকার করে নইলে আমাদের কে ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ করতে হতো।
আসান নগড় গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম আলী বলেন, টাংগন নদীর ক্যানেলের পানি ছাড়া আমরা আমন চাষ করতে পারি না কারণ এই এলাকাটা উঁচু তাই টাংগন নদীর সেচ প্রকল্পই আমাদের একমাত্র ভরসা।
আকচা ইউনিয়নের আকচা গ্রামের কৃষক সুধীর চন্দ্র জানান, শুক নদীর বুড়ী বাঁধ সেচ প্রকল্প না থাকলে আমরা হয়তো আমন ধানের চাষ করতে পারতাম না। তিনি আরও বলেন, আমি ৩ একর জমিতে সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে আমন ধানের চারা রোপণ করতেছি সত্যিই সেচ প্রকল্পটি আমাদের মত হাজার হাজার কৃষকের অনেক উপকার করে আসছে।
এ বিষয় ৩ নং আকচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, আমার আকচা ইউনিয়নের চার ভাগের প্রায় এক ভাগ জমি উচু আর এই সব উচু জমিতে আমন চাষের একমাত্র ভরসা শুক নদীর বুড়ী বাঁধ সেচ প্রকল্পের ক্যানেলের পানি তাই আমি বলতে পারি বুড়ী বাঁধ সেচ প্রকল্পটি কৃষকদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায় বলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় প্রায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয় এর মধ্যে বেশ কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকেনা এই উঁচু অঞ্চলের কৃষকের সুবিধার্থে আমাদের সদর উপজেলায় দুটি সেচ প্রকল্প রয়েছে একটি টাংগন সেচ প্রকল্প আরেকটি বুড়ী বাঁধ সেচ প্রকল্প এই দুটি সেচ প্রকল্প দিয়ে সেই কৃষকগণ আমন চাষ করেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান বলেন, ঠাকুরগাঁও এলাকাটি এমনিতেই দেশের সব চাইতে উঁচু আর এই উঁচু অঞ্চলের কৃষকদের জন্য সেচ প্রকল্প দুটি একটি টাংগন সেচ প্রকল্প আরেকটি বুড়ী বাঁধ সেচ প্রকল্প নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় দুটি সেচ প্রকল্প রয়েছে একটি টাংগন সেচ প্রকল্প আরেকটি বুড়ী বাঁধ সেচ প্রকল্প এই দুটি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যানেল দিয়ে সদর উপজেলার উঁচু জমিতে আমন মৌসুমে সেচ দেওয়া হয় যাতে করে এই সব এলাকার কৃষকগুলো ডিজেল চালিত ইঞ্জিন বা অন্য কোন উপায় যেমন অর্থ দিয়ে সেচ না করতে হয় এ জন্য আমরা বিনামূল্যে সেচ প্রকল্প দুটি দিয়ে পানি সরবরাহ করে থাকি এবং আপনি অবশ্যই অবগত আছেন ইতিমধ্যে আমরা সেচ প্রকল্প দুটির পূনসংস্করনের কাজ হাতে নিয়েছি যা চলমান। আশা করি সেচ প্রকল্প দুটির সংস্করণের কাজ সমাপ্তি হলে স্থানীয় কৃষকগণ আরও উপকৃত হবে।