রুক্কু রাজাকারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হলেও চাকরি নেয়া দু’সন্তান এখনো বহাল!
সাজ্জাদ হোসেন, মুরাদনগর প্রতিনিধি
মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে করা মামলায় আসামি ছিলেন, গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন। এলাকায় রাজাকার হিসেবে পরিচিত। তবু তিনি সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়া মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা নিয়েছেন। তাঁর দুই সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ বাহিনী ও ব্যাংকে এখনো চাকুরী করছেন।
এমন অভিযোগের বিষয়ে আপিলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমানীত না হওয়ায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৩৯তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার লাল মুক্তিবার্তা গেজেট বাতিল করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রতারণার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী মামলায় বাবা জেল খাটার পরও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাবার নামে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে সরকারি চাকুরী করছেন দুই ভাই। তাদের বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হবার পরও তারা এখনো চাকুরীতে রয়েছেন বহাল তবিয়তেই। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে চাকুরী করা দুই ভাই হলেন, ঢাকা র্যাব-১ সিপিসি-২ এর
ডিএডি পদে কর্মরত জামাল হোসেন ও অগ্রনী ব্যাংক কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা রুপবাবু বাজার শাখার দ্বিতীয় কর্মকর্তা মহসীন মিয়া। এরা দু‘জনেই সম্প্রতি বাতিল হওয়া মুক্তিযোদ্ধা জব্বার আলী ওরফে রুক্কু মিয়ার ছেলে। জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের
বাসিন্দা জব্বার আলী মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেয়েছেন ২০০৯ সালে। ১৯৯৬ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রকাশিত স্মরণিকা লাল মুক্তিবার্তায় নাম ছিল জব্বার আলীর (যার নম্বর ০২০৪০৮০৬৯৩)। তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, দালাল আইনে যাঁর নামে মামলা ছিল, তাঁকে কোন বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হলো? কারা এ সনদ নিয়ে দিল? লাল মুক্তিবার্তায় নাম ওঠানোও সহজ কথা নয়। মুরাদনগরের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানায়, ১৯৭১ সালে
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন জব্বার আলী। ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল মুরাদনগর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়। মামলা নম্বর- ১২৭, জি-আর ২৭৪/১২। এ মামলায় তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। মামলা চলার সময় তিনি সাধারণ
ক্ষমা পান। জব্বার আলীর ছেলে জামাল হোসেন ১৯৯৯ সালের ২৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি পেয়ে বর্তমানে পদোন্নতি নিয়ে ঢাকা র্যাব-১ সিপিসি-২ এর ডিএডি পদে কর্মরত রয়েছেন। আরেক ছেলে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির জন্য মনোনীত হয়ে পরে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধাদের অভিযোগ ও বাধাঁর কারনে সেখানে যোগদান না করলেও এখন এ সনদেই একটি ব্যাংকে দ্বিতীয় কর্মকর্তার পদে চাকুরী করছে।
শুক্রবার দুপুরে মুরাদনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী সরকার ও দারোরা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি
কমান্ডার আবদুল করিম মোল্লা বলেন, জব্বার আলীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রাপ্তি অর্থের বিনিময়ে হয়ে থাকতে পারে। এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের মুখে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা
ভাতা বন্ধ করে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর আমাদের অভিযোগের পর তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার দুই সন্তানকে চাকুরী হতে অব্যাহতি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। যোগাযোগ করা হলে জব্বার আলীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি গত ২০১৭
সালের ১৫ জুন মারা গেছে। তাঁর ছেলে বাঙ্গরা রুপবাবু বাজার অগ্রনী ব্যাংক শাখার দ্বিতীয় কর্মকর্তা মহসীন মিয়া বলেন, ‘এ সব অভিযোগ মিথ্যা। বাবার নামে সে সময়
দালাল আইনে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া আমার ভাই ও আমি মুক্তিযোদ্ধা কোটায়
সরকারি চাকরি পেয়েছি বলে এসব ষড়যন্ত্র করছেন স্থানীয় কিছু মুক্তিযোদ্ধা।’