সাফ জয়ী মনিকার গ্রামের বাড়িতেও উৎসবের আমেজ

অনলাইন ডেস্ক।।

গত বুধবার নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন শিপে টানা দ্বিতীয় বারের মতো শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশে। ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আর এ দলের অন্যতম সদস্য মনিকা চাকমা। গত বুধবার থেকেই সারা দেশের ন্যায় মনিকা চাকমার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ির দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী জনপদ সুমন্ত পাড়ায়ও উৎসবের আমেজ বইছে। শুধু সুমন্ত পাড়ায় নয়, গোটা লক্ষ্মীছড়ি এখন আনন্দে আত্মহারা।

শিরোপা জিতার পর থেকেই এলাকাবাসী ছুটে আসেন তার বাড়িতে এবং নানা স্লোগানে এখন মুখরিত সুমন্ত পাড়া। শিরোপা জেতার খুশিতে এলাকাবাসীকে মিস্টি ও বিস্কিট খাইয়েছেন তার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা ও মা রবিমালা চাকমা।

২০১৯ সালে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে করা একটি গোলে করে পরিচিতি পান। ফিফা তার ঐ গোলটিকে ‘জাদুকরী গোল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এই জাদুকরী গোলের মাধ্যমেই ‘ম্যাজিকেল মনিকা’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। তবে তার উঠে আসার গল্পটাও অতটা সহজ ছিল না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে লক্ষ্মীছড়ি মরাচেগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলেন জেলা পর্যায়ে। পরে অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় পর্যায়ে খেলার ডাক পান।

২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হওয়া এএফসি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে দেশের হয়ে করেন তিনটি গোল। সেবার টুর্নামেন্টের তৃতীয় স্থান ও ফেয়ার প্লে ট্রফি জিতে বাংলাদেশ। এরপর ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে প্রথম বারের মতো সাফ শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ। আর দ্বিতীয় বারের মতো সাফ ফুটবলের শিরোপা অর্জনে সাফল্যে ভাসছে গোটা দেশ।

দেশের নারী ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্র মনিকা চাকমা ছোটবেলায় বেড়ে ওঠেন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী জনপদ সুমন্ত পাড়ায়। উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় তার গ্রামে। তার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা ও মা রবিমালা চাকমার সবচেয়ে ছোট মেয়ে মনিকা চাকমা। ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া মনিকার ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল বেশ। তবে তার বাবা চাইতেন না সে ফুটবল খেলুক। তাই বাবাকে ফাঁকি দিয়েই ফুটবল খেলতেন মনিকা।

তবে তার সঙ্গী ছিলেন বড়বোন অনিকা চাকমা। পরিবারের সকল বাঁধা পেরিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ফুটবল খেলতেন দেশের এই তারকা ফুটবলার। তবে কে জানতো মনিকা চাকমাই পুরো দেশ মাতাবেন। অবদান রাখবেন দেশের ফুটবল অঙ্গণে। তবে তার শিক্ষক বীরসেন চাকমা ও গোপাল দে ছিল ম্যাজিকেল চাকমা হিসেবে বেড়ে ওঠার পেছনের কারিগর।

মনিকা চাকমার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা জানান, একটা সময় আমি চাইতাম না, মনিকা ফুটবল খেলুক কিন্তু এখন আমি আমার মেয়ের সাফল্যে গর্বিত ও আনন্দিত। সে শুধু আমার পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেনি, সারাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। বাসা থেকে বের হলে সবাই সম্মান করে পরিবার ও মনিকার খোঁজখবর নিচ্ছে। এর চেয়ে গর্বের কি হতে পারে?

মনিকার মা রবিবালা জানান, বুধবার মেয়ের খেলা আছে, তাই সকল কাজ কর্ম শেষ করে খেলার খবরে বাড়তি আগ্রহ ছিল। কেননা আজ আমার মেয়ে খেলবে। আর শিরোপা জিতায় খুব ভালো লাগছে। আর এ ম্যাচে আমার মেয়ে মনিকা একটি গোলও করেছে। খেলায় জিতার পর মিষ্টি ও বিস্কুট খাইয়েছি পাড়াবাসীকে। এসময় মনিকার চাকমার জন্য সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন।

বাংলাদেশ দলের হয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় অভিনন্দন জানাতে মনিকা চাকমার বাড়িতে ছুটে গিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছেনমং রাখাইন। তিনি জানান, মনিকা দেখিছেন বিভাগে দুর্গম পাহাড় থেকে দেশের হয়ে সুনাম বয়ে আনা যায়। তার বেড়ে ওঠা যদিও সহজ ছিল না, তারপরও নিজের একান্ত আগ্রহ ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে তিনি আজ ম্যাজিকেল চাকমাা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। অত্র উপজেলায় তার আগমনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সূত্রঃ বিডি24লাইভ
একে/অননিউজ24

আরো দেখুনঃ