সাঈদীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক মামলা করানোর অভিযোগ বাদীর
অনলাইন ডেস্ক।।

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক মিথ্যা মামলা ও সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করায় শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন মামলার বাদী মো. মাহবুবুল আলম হাওলাদার ও দুই সাক্ষী। ওই দুই সাক্ষী হলেন, মাহতাব উদ্দিন ও আলতাফ হাওলাদার। তারা বলেন, সাঈদী রাজাকার ছিলেন না, তার বিরুদ্ধে আমরা মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছি।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন তিনি। তাদের পক্ষে অভিযোগটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হোসেন।
শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন ,সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির, শাহিনুর ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন পিরোজপুর-১ আসনের এমপি একেএম আউয়াল ওরফে সাইদুর রহমান, তদন্ত সংস্থার সাবেক সহসম্বয়ক সানাউল হক খান, তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনসহ ৪০ জন।
মো. মাহবুবুল আলম হাওলাদার বলেন, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। আমাকে পিরোজপুরের তৎকারীন স্থানীয় এমপি একেএমএ আউয়াল ও তার লোকজনের সহযোগিতায় নির্যাতন ও মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করতে আমাকে বাধ্য করেছিল। শেখানো জবানবন্দি আদালতে দিতে বাধ্য হই। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী (জিযানগর) থানার পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলের মাঠে আমাকে বাসা থেকে জোর করে ধরে নিযে যায়। তাদের সাথে ঐদিন আসামি পিরোজপুর সদর থানার তৎকালীন ওসি ও আসামি ইন্দুরকানী (জিযানগর) থানার তৎকালীন ওসি নাসিরউদ্দিন মল্লিকসহ আরো কিছু পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগের লোকজন উপস্থিত ছিল। ঐদিন ঘটনাস্থল রাজলক্ষ্মী স্কুলে মানিক পসারী, সুখরঞ্জন বালি, রুহুল আমিন নবীন, মধুসুদন ঘরামী, সুলতান, মফিজ পসারী, বাবুল পণ্ডিত, জলিল শেখ, গৌরাঙ্গসহ আরো অনেককে আমি দেখতে পাই, (এদের সবাইকেই ট্রাইবুনালে সরকাররের শেখানো স্বাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা হয়েছিল)।
আসামি হাবিবুর রাহমান মালেক বলেন, হেলাল ভাই তোমাদেরকে যা বলতে বলে আর যা করতে বলে তোমাদের সেটাই করতে হবে। এর অন্যথা হলে আমাকে তো তোমরা চেনোই, তোমাদের ঘরের লোকেরা তোমাদের লাশও খুজে পাবেনা। এরপর আসামি হেলালউদ্দিন আমাদের স্কুলের অপর একটি রুমে নিয়ে যায় এবং আমাদের কাছে পিরোজপুর শহর ও ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) থানায় ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধচলাকালীন সময়ের সব ঘটনা জানতে চায়। অতঃপর আমরা ঐ সময়কার যত সত্য ঘটনা জানি তা খুলে বলি। রাজাকারদের হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ সকল অপকর্মের সত্য ঘটনাগুলো সব আমরা তাকে বলি। কিন্তু আমরা সেখানে কেউই সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে কিছুই বলিনি। তাকে আমাদের মধ্যের অনেকেই তখন চিনতাম। তিনি রাজাকার ছিলেন না, আর মহান মুক্তিযুদ্ধের কোন ঘটনায় আমরা তার নামও বলিনি। কিন্তু পরবর্তীতে আসামি তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাদেরকে বলে, সকল রাজাকারের নামের সাথে সাঈদীর নামও যুক্ত করতে বলে। আমরা অস্বীকার করলে হেলালউদ্দিন আমাদের এলোপাথারি মারতে থাকে।
অভিযোগে বলা হয়, ৭১ সালে পাকসেনারা সুখরঞ্জন বালির ভাই বিশাবালিকে হত্যা করে। আসামি হেলালউদ্দিন সুখরঞ্জন বালিকে তার ভাই বিশাবালি হত্যার জন্য সাঈদী হুজুরকে দায়ি করে জবানবন্দি দিতে বলে। কিন্তু সুখরঞ্জন বালি রাজি না হওয়ায় তাকে হেলালউদ্দিন ও উপস্থিত অন্যরা চরম অত্যাচার শুরু করে। এরপর পিস্তল ঠেকিযে হেলাল বলেন, “আমার শেখানো মতে জবানবন্দী না দিলে তোদেরকে এখনি গুলি করে হত্যা করব।” তাদের করা নির্যাতন আর সইতে না পেরে এবং মেরে ফেলার হুমকিতে ভয় পেয়ে আমরা তাদের শেখানো মতে মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের করা সব অপকর্মের ঘটনায় সাঈদী সাহেবের নাম বলতে রাজি হই। এবং জানের ভয়ে আমরা আসামী হেলালউদ্দিন যে জবানবন্দি লিখে দেয় তাতে আমরা সাক্ষর করি।
একদিন আমিসহ ৫/৬ জনকে ট্রাইবুনালে নিয়রে যাওয়া হয়। সেখানে আসামি হেলালউদ্দিন, সৈয়দ হায়দার আলী, আসামি রানা দাস গুপ্ত, আসামী মোখলেছুর রহমান আমাদেরকে এজলাস ঘুরিযে দেখায়। কিছুক্ষণ পরে সেখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সাবেক চেয়ারম্যান আসামি বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক আসামি বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির ও ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহিনুর ইসলাম আসেন। গোলাম আরিফ টিপু (বর্তমানে মৃত) ও আসামী সানাউল হক তখন উক্ত আসামী নিজামুল হক নাসিমের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলে আসামি সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম আমাদেরকে বলেন যে, “তোমাদের যেভাবে শেখাযে পড়াযে আনছে, সেভাবে সাক্ষী দেবা, তাইলে পুরস্কার পাবা। তুমি ভুল সাক্ষী দিলেও আমি ঠিক কইরা নিবো। কিন্তু সাঈদীর নাম না কইলে তোমাদের রক্ষা নাই। শেখানো সাক্ষী দেবা তাইলে পুরস্কার পাবা। তোমরা খালি নাম কইবা, সাঈদীকে ফাঁসি দেয়ার দাযিত্ব আমার, তোমাগো কোনো ভয় নাই।” আসামি এ টি এম ফজলে কবির আমাদেরকে একইভাবে শেখানো স্বাক্ষ্য না দিলে হত্যার হুমকি দেন।
আসামী নিজামুল হক নাসিমের উক্ত কথার সাথে সম্মতি দিযে উপস্থিত আসামী ট্রাইবুনালের রেজিস্ট্রার শাহিনুর ইসলাম আমাদেরকে তাদের কথা মতো সাক্ষী না দিলে জীবননাশের হুমকি দেন এবং বিষযটা মনে থাকে যেন বলে শাসান। বিচারকগণের এমন আচরণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও আইনের ঘোরতর লঙ্ঘন, যা ন্যায়বিচারকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে এবং এটি ফ্যাসিবাদী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। হত্যার হুমকি মাধ্যমে আমাদেরকে দিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য আদায় করে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা যুদ্ধাপরাধ/মানবতাবিরোধী অপরাধের মামল্যাটি ছিল মূলত সম্পূর্ণ সাজানো, মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
অভিযোগকারীরা বলেন, এই মামলা করিয়ে আমাদের সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করে মিথ্যাবাদী হিসেবে চিত্রায়িত করে, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকে বিষাক্ত করে তুলে, অব্যাহত হযরানি ও নির্যাতনের মাধ্যমে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ধ্বংস করে দিয়েছে আসামিরা। এ ঘটনায় আসামীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, গ্রেফতার এবং বিচার নিশ্চিত করার জন্য আবেদন জানানো হয়।
পরে এ বিষয়ে তাদের আইনজীবী পারভেজ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ২০০৯ সালে মাহবুবুলকে ডেকে আল্লামা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেন সেখানকার তৎকালীন এমপি আউয়াল। তবে রাজি না হওয়ায় তাকে তৎকালীন পিপি কার্যালয়ে তুলে নেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এরপর দীর্ঘ নির্যাতনের একপর্যায়ে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে সাঈদীর নামে মিথ্যা মামলা দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও এ মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেন। তখনও তাকে যাত্রাবাড়ী থানার অধীনে কথিত সেইফ হোমে এনে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। অভিযোগকারী বাকি দুই সাক্ষীরও একইভাবে জবানবন্দি নেন তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম।
প্রসঙ্গত, গত ২১ আগস্ট সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গুমসহ নির্যাতনের দায়ে শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি। অভিযোগের পাশাপাশি তিনি শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
সূত্রঃ unnoyon songbad
আই/অননিউজ২৪।।