৬২৯ কোটি টাকার ধরলা প্রকল্পে ধসের হুমকি: আতঙ্কে কুড়িগ্রামের মানুষজন।

শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামে ধরলা নদীর তীরে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি বড় অংশ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রায় ৩৫০ মিটার দীর্ঘ বাঁধটির অন্তত ৩০ মিটার অংশে একের পর এক সিসি ব্লক দেবে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

বাঁধের এই বিপজ্জনক অবস্থা স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে। আশপাশের সহস্রাধিক পরিবার ও কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বাঁধে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, যথাযথ প্রস্তুতি না থাকায় সিসি ব্লক পর্যাপ্ত পরিমাণে ফেলা হয়নি এবং ডাম্পিং জোনগুলোতে সুরক্ষা দুর্বল ছিল। ফলে প্রবল স্রোতের আঘাতে বাঁধের স্থিতি টিকে থাকতে পারছে না।

সারডোব গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এই বাঁধ আমাদের একমাত্র ভরসা। এটা ভেঙে গেলে শুধু ঘরবাড়ি না, আমাদের কৃষিও ধ্বংস হয়ে যাবে।” একই কথা বলেন নজরুল ইসলাম ও আব্দুল হোসেনসহ অনেকেই। তাদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে প্রায়ই এমন বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

২০২০ সালে শুরু হওয়া ৬২৯ কোটি টাকার ধরলা প্রকল্পের আওতায় ধরলা নদীর তীর সংরক্ষণ, বিকল্প বাঁধ নির্মাণ এবং পুরনো বাঁধ পুনর্নির্মাণসহ ব্যাপক কাজ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে অন্তত ২২ হাজার ৪০০ পরিবার, ৫০টি হাটবাজার, ৩০টি নৌ-ঘাট এবং ১০ হাজার হেক্টর জমি সুরক্ষিত হয়েছে।

তবে এখন সারডোব এলাকায় নতুন করে বাঁধের ধস প্রকল্প বাস্তবায়নের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুন্না হক বলেন, “উজানে চর জেগে ওঠায় নদীর স্রোত এখন সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। ফলে কিছু অংশ দেবে গেছে। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানি কমে গেলে পুরোপুরি মেরামত করা হবে।”

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, প্রকল্পটি এখনো হস্তান্তর হয়নি। ফলে বাঁধের যেকোনো ক্ষতির দায় ঠিকাদারকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, “বাঁধের পরিস্থিতি আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছি। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ২০২২ সালের মতো বড় ধরনের বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি আবারও তাদের বিপর্যস্ত করে তুলবে।

jn

আরো দেখুনঃ