হোমনায় পুলিশের মামলায় আসামি ২ হাজার ২শ, গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রাম

কুমিল্লা প্রতিনিধি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগে কুমিল্লার হোমনায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে একাধিক ঘর ও চারটি মাজারে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুই হাজার দুইশ অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

হোমনা থানার এসআই তাপস কুমার সরকার বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার গভীররাতে এ মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

সরেজমিনে ঘটনাস্থল হোমনা উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মামলা ও গ্রেপ্তার আতংকে এলাকা অনেকটা পুরুষ শুন্য। কোথাও মানুষ আছে, কোথাও নাই। পুরো এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পুলিশ জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করেনি। এজন্য মামলা দায়ের করেছে হোমনা থানা পুলিশ। মামলার এজাহারে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চুরি ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুড়ে যাওয়া মাজারের সামনে কথা হয় গ্রেপ্তার মহসিনের মা মিনুয়ারা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ছেলেকে (মহসিন) তো পুলিশের হাতে তুলে দিলাম। এরপরও আমাদের মাজার ও বাড়িতে কেন আগুন দেয়া হল। পুলিশ কোন নিরাপত্তা দিতে পারলো না কেন? এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হই। টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ কোন মালামাল রক্ষা করতে পারিনি। জীবনটা কোন মতে রক্ষা করেছি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘বেমজা মহসিন’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত বুধবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে মহসিন নামের এক যুবক আপত্তিকর পোস্ট দেন। এ ঘটনায় স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা থানার সামনে জড়ো হয়ে মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করেন। দুপুরে উপজেলার আসাদপুর গ্রামের ফকিরবাড়ি এলাকা থেকে মহসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগাঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম বাদি হয়ে মহসিনের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় একটি মামলা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

এদিকে ফেসবুকে আপত্তিকর ওই পোষ্ট ও ওই মাজারগুলোকে কেন্দ্র করে নিয়মিত মাদকের আড্ডা ও শরিয়তবিরোধী নানা কাজকর্ম চলত দাবি এলাকার একাংশ বাসিন্দাদের। নাম না প্রকাশের শর্তে তারা বলেন, এসব বিষয়কে কেন্দ্র বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে আসাদপুর গ্রামে কফিল উদ্দিন শাহ ও হাওয়ালি শাহ মাজারে আগুন এবং কালাই শাহ ও আবদু শাহ মাজারে হামলা-ভাংচুর করে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট।

বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগাঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, আমরা নবী প্রেমি ও মাজারপন্থী মানুষ ৷ এবং বিশ্বাস করি সুন্নী আকিদা। আমার নবীকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ায় আমি মামলা করেছি। কিন্তু মাব সৃষ্টি করে মাজার ও বাড়ি-ঘরে হামলা অগ্নিসংযোগ কখনো মেনে নেওয়া যায় না।

আসাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ডালিম বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে ছিল ফেসবুকে মহানবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির অভিযোগে মহসিনের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিল হবে। বিক্ষোভ মিছিলে আমাদের গ্রাম আসাদপুর সহ আশেপাশের গ্রামের লোকজন আসে। এই মিছিল চলাকালে মাজারে হামলা হয়। এই হামলা আসাদপুর গ্রামের লোকজন করেনি। হঠাৎ বাহিরের কিছু লোকজন বিক্ষোভ মিছিল থেকে বেরিয়ে গিয়ে মাজারে হামলা করে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসাদপুর গ্রামের রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম চৌধুরী খোলা কাগজকে বলেন, আসাদপুর গ্রামে ঘর ও মাজারে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২২০০ অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাসুল (সা.) কে নিয়ে কটুক্তি করে পোস্ট দেওয়া যুবককে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা খোলা কাগজকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এলাকায় পুলিশ ও সেনা টহল অব্যাহত আছে। প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যেন আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো: নাজির আহমেদ খাঁন খোলা কাগজকে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘডটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, আলামত সংগ্রহ করে সোর্সদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উস্কানি দাতা ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

JN

আরো দেখুনঃ