এরদোয়ানকে ওমর (রা.) স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রের প্রতিলিপি উপহার জেরুজালেমের পাদরির
অনলাইন ডেস্ক।।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমরের (রা.) স্বাক্ষরিত একটি ঐতিহাসিক চুক্তিপত্রের প্রতিলিপি উপহার দিয়েছেন ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের গ্রিক অর্থোডক্স পাদরি থিওফিলোস জিয়ানোপোলোস। ৬৩৮ সালে জেরুজালেম দখলের পর খ্রিষ্টানদের শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে ওই চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন হজরত ওমর (রা.)।
তুর্কি বার্তা সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন মতে, গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ইস্তাম্বুলের দোলমাবাহচে প্রাসাদে তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন জেরুজালেমের গ্রিক অর্থোডক্স পাদরি থিওফিলোস জিয়ানোপোলোস। এ সময় এরদোয়ানের হাতে ঐতিহাসিক চুক্তিপত্রের প্রতিলিপি তুলে দেন তিনি।
প্রতিবেদন মতে, বৈঠকে গাজায় ইসরাইলের চলমান আগ্রাসন, জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর নিরাপত্তা ও নানা ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান, যোগাযোগ পরিচালক বুরহানেত্তিন দুরান এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আকিফ চাগাতায় কিলিচ।
ইতিহাস অনুসারে, ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম বাহিনী বাইজেন্টাইন শাসকদের দখলে থাকা জেরুজালেম জয় করে। শহরটি খ্রিষ্টান ধর্মের কেন্দ্রীয় তীর্থস্থান হওয়ায় স্থানীয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায় মুসলিম বিজয়ে আতঙ্কিত ছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল, মুসলিম শাসকরা হয়তো তাদের উপাসনালয় ধ্বংস করবে, ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নেবে অথবা জোরপূর্বক ধর্মান্তরে বাধ্য করবে।
কিন্তু বাস্তবে তাদের এই ধারণার ঠিক উল্টোটা ঘটে। খলিফা হজরত ওমর (রা.) শহরে প্রবেশ করেন সাধারণ পোশাকে বিনয়ের সঙ্গে, কোনো বিজয়ীর অহঙ্কার ছাড়াই। এরপর তিনি সরাসরি শহরের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ঘোষণা দেন। ওই সময় একটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেন তিনি।
গত রোববার সেই চুক্তিপত্রের একটি প্রতিলিপি এরদোয়ানকে উপহার দেন জেরুজালেমের পাদরি। এদিন খ্রিস্টান পাদরির সঙ্গে বৈঠকের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, বৈঠকে গাজার মানবিক বিপর্যয় ও ইসরাইলের আগ্রাসন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এরদোয়ান।
তিনি বলেছেন, ‘জেরুজালেমে ইসরেইলের পদক্ষেপ শহরের ঐতিহাসিক মর্যাদা ও পবিত্রতাকে ধ্বংস করছে। মুসলিম, খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের সহাবস্থানের ঐতিহ্য সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছে।’
এরদোয়ান আরও উল্লেখ করেন, নেতানিয়াহু এক ভয়াবহ গণহত্যার নকশা বাস্তবায়ন করছেন। সম্প্রতি কাতারের বিরুদ্ধেও হামলা চালিয়েছেন, তার শান্তির প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ইসরাইল এখন মসজিদ ও চার্চ কোনো কিছুই রেহাই দিচ্ছে না।’ এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, মুসলিম ও খ্রিষ্টান ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর সুরক্ষায় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখা হবে।
তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। আঙ্কারার মতে, এটিই ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের একমাত্র উপায়। শুধু বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাই নয়, পবিত্র স্থানগুলোর নিরাপত্তার বিষয়েও সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক।
গত জুলাইয়ে জিয়ানোপোলোস ও লাতিন প্যাট্রিয়ার্ক পিজ্জাবাল্লা গাজার ধ্বংসযজ্ঞ সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন। সে সময় ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হোলি ফ্যামিলি চার্চে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তাঁরা।
সূত্রঃsomoy
আই/অননিউজ২৪।।