ভ্যানওয়ালার পক্ষে দাঁড়ানোই ‘অপরাধ’?— চাঁদাবাজ সাজিয়ে ব্যবসায়ীকে হয়রানি ,চকবাজারে ব্যবসায়ী রুবেলকে চাঁদাবাজ সাজিয়ে হয়রানির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কুমিল্লা নগরীর চকবাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ী নেতার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে অপর এক ব্যবসায়ীকে চাঁদাবাজ সাজিয়ে মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচারের মাধ্যমে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যবসায়ী রুবেলের পরিবার দাবি করেছে— রুবেল একজন শান্তিপ্রিয়, ধার্মিক ও সুনামধারী ব্যবসায়ী, যিনি কখনোই কারও কাছে চাঁদা দাবি করেননি বা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে নগরীর চকবাজার এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী রুবেলের বোন মিমি আক্তার এ অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রুবেলের বাবা আব্দুর রহিম, মা ঝর্ণা বেগম, স্ত্রী সেলিনা আক্তার, বোন পিংকি আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিমি আক্তার বলেন, “আমার ভাই রুবেল দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা চকবাজার এলাকায় সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। ব্যক্তিগতভাবে শান্তিপ্রিয়, ধর্মপ্রাণ ও সৎ মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। সম্প্রতি তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।”
তিনি জানান, কয়েকদিন আগে চকবাজার তেরিপট্টি এলাকার সামনে এক ভ্যানচালক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাস্তার পাশে ভ্যানগাড়িতে করে পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বিক্রি করছিলেন। স্থানীয় কিছু দোকানদার ওই হকারের পণ্য জোর করে রাস্তায় ফেলে দেয়। বিষয়টি দেখে রুবেল প্রতিবাদ করলে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে ওই দোকানদারদের একটি পক্ষ রুবেলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।
“ভাই যখন হকারের পক্ষ নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, তখনই কয়েকজন প্রভাবশালী দোকানদার তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। তাকে যুবদল কর্মী হিসেবে প্রচার করে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় এক ব্যবসায়ী নেতা থানায় গিয়ে রুবেলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করেন। অথচ, যাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা নিজেরাই বলেছেন এ তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা,”— বলেন মিমি আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, অভিযোগে যেসব ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে, তাদের কেউই রুবেলের বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা জানেন না। অভিযোগে নাম থাকা কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান— “আমাদের কাছ থেকে কেউ কোনো চাঁদা চায়নি, এবং এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। অভিযোগকারী আমাদের না জানিয়ে আমাদের নাম ব্যবহার করেছে।”
এমনকি, এক ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন যে, “ব্যবসায়ী নেতা ব্যক্তিগত স্বার্থে আমাদের নাম ব্যবহার করেছেন। বিষয়টি আমরা ভিডিও করে রেখেছি।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক ব্যবসায়ী জানান, “ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে ওই নেতা আমাদের নাম টেনে এনেছেন। আমরা কোনো পক্ষেই নেই। ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হোক, সেটা কেউই চাই না। আমরা মিথ্যা আশ্রয়ে থাকতে চাই না।”
এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, অভিযুক্ত ব্যবসায়ী নেতা এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে জড়ালে সাধারণ ব্যবসায়ীরা ভয়ে মুখ খোলেন না। অনেকে নিরুপায় হয়ে তার সঙ্গে একমত হওয়ার ভান করেন। তবে, পরে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে অনুশোচনা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রুবেলের মা ঝর্ণা বেগম বলেন, “আমার ছেলে কারও কাছ থেকে কখনো টাকা চায়নি। সে দোকানে দোকানে ঘোরে না, নিজের কাজ নিয়েই থাকে। এলাকায় সে ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। এখন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তার জীবনের সুনাম ধ্বংসের চেষ্টা চলছে।”
রুবেলের বাবা আব্দুর রহিম বলেন, “আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের। সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই এখন তাকে চাঁদাবাজ বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা হোক।”
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও অনলাইন পোর্টাল রুবেলকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। এসব সংবাদ যাচাই-বাছাই না করে ছড়িয়ে দেওয়ায় রুবেল ও তার পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
মিমি আক্তার বলেন, “আমরা দেখছি, ফেসবুকে নানা ভুয়া স্ট্যাটাস, ভিডিও, এমনকি খবরের স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে। এগুলোর সবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি— এসব অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
রুবেলের পরিবারের সদস্যরা জানান, রুবেল কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি স্থানীয় একটি ক্রীড়া দলের খেলোয়াড় এবং নিয়মিত নামাজ আদায়কারী। স্থানীয় তরুণদের ক্রীড়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে তিনি ভূমিকা রাখেন।
তার বোন পিংকি আক্তার বলেন, “আমার ভাই ছোটখাটো ব্যবসা করে, পাশাপাশি এলাকার ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত। ও সবসময় মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহ দেয়। অথচ আজ তাকে হেয় করা হচ্ছে। আমরা প্রশাসন ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই।”
সংবাদ সম্মেলনে রুবেলের পরিবার কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায়— ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তারা বলেন, “মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচারের মাধ্যমে একজন নির্দোষ ব্যবসায়ীকে সামাজিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা চলছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ধরনের অন্যায় আরও বাড়বে।”
চকবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এলাকায় এখন ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও প্রভাব খাটিয়ে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। এতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা চাই এলাকার ব্যবসায়িক সম্পর্ক সুস্থ থাকুক। কিন্তু কেউ যদি প্রভাব দেখিয়ে নির্দোষ মানুষকে দোষী বানায়, তাহলে ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষে রুবেলের পরিবার বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চাই। আমাদের ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। যেসব অনলাইন বা ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
তারা আরও বলেন, “আমরা চাই না কেউ অন্যায়ভাবে অপমানিত হোক। একজন সৎ ব্যবসায়ী ও সাধারণ পরিবারের সদস্যকে মিথ্যা অভিযোগে জড়িয়ে তার জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে— এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”