নির্বাচনকালীন সময়ে নাগরিকদের নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কুমিল্লায় ‘রাজনৈতিক সম্প্রীতি বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত।
জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা:

কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘রাজনৈতিক সম্প্রীতিবিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক’ শীর্ষক এক সেমিনার। শনিবার নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে দিনব্যাপী এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
রাজনৈতিক সম্প্রীতির ক্যাম্পেইন-এর অংশ হিসেবে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল-এর মাল্টি-পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (MAF) এর আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরুণ সদস্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের সদস্য, সাংবাদিক এবং তরুণ ভোটার, শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
‘নির্বাচনকালীন সময়ে নাগরিকদের নিরাপদ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে অ-সহিংস সম্পৃক্ততা, পারস্পরিক সম্মানজনক সহাবস্থান ও নিয়মিত সংলাপে উৎসাহিত করা’ এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য।
এসময় বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন মাল্টি-পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (MAF)-এর সভাপতি বদরুল হুদা জেনু, সাংবাদিক শাহাজাদা এমরান, সাংবাদিক মহিউদ্দিন মোল্লা, ঐতিহ্য কুমিল্লার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল।
আলোচকরা সেমিনারে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের তরুণ সদস্য, তরুণ ভোটার ও শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত মতামতের ওপর আলোচনা করেন।
MAF-এর প্রকল্প কর্মকর্তা সাইফুল হোসেন বাবু এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ইন্টার্ন সদস্য ফারিয়া ফরিদ তনয়া এর সঞ্চালনায় মতামত উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট ফারহানা সেলিম সুমাইয়া বিনতে হোসাইন, রূপালী আক্তার, কামরুন নাহার, ইমরাত জাহান এনি, ফারিয়া অনন্যা, সায়মা সুলতানা ফারিয়া।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল-এর সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার আবুল বাশার। বক্তব্য দেন কনসালটেন্ট রুবাইয়াত হাসান।
রাজনৈতিক সম্প্রীতির এই ক্যাম্পেইন-এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তারা বলেন, বাংলাদেশে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই নির্বাচন মৌসুম শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কার্যক্রম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে। প্রোগ্রামের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ ও সংলাপের ক্ষেত্রে এখনও ঘাটতি রয়েছে, যা প্রায়ই ভুল-বোঝাবুঝি ও উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই যোগাযোগ ঘাটতি দূর না হলে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে এবং এতে সম্প্রদায়ের শান্তি ও নাগরিক অংশগ্রহণ– বিশেষ করে নারী ও যুবকদের অংশগ্রহণ– ব্যাহত হতে পারে।
গত এক বছরে বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয় সেমিনারে। সেগুলো হলো— বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আন্তঃদলীয় সংঘর্ষ; দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত অন্তর্দ্বলীয় বিরোধ; ভয়, গুজব বা রাজনৈতিক চাপের কারণে সম্প্রদায়ভিত্তিক সংঘাত। এই অভিজ্ঞতাগুলো প্রমাণ করে যে, সহিংসতা প্রতিরোধ ও আস্থা গড়ে তুলতে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
সেমিনারে জানানো হয়, ২০২৫ সালের দুর্গাপূজা চলাকালীন সময়ে, ১৬টি জেলায় মাল্টি-পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম (MAF)-এর নেতারা দলীয় বিভাজন অতিক্রম করে একসঙ্গে কাজ করেছেন, পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন এবং কমিউনিটি কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই যৌথ উদ্যোগগুলো সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ভয়ের মাত্রা কমিয়েছে এবং স্থানীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সম্প্রীতির ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো যোগাযোগের গ্যাপ পূরণ করা এবং দলীয় বিভাজন অতিক্রম করে নিয়মিত সংলাপ উৎসাহিত করা। এই ক্যাম্পেইন রাজনৈতিক নেতাদের তথ্য বিনিময়, যৌথভাবে কাজ করা, এবং প্রতিযোগিতাকে শান্তিপূর্ণ, সম্মানজনক ও সমাজের স্থিতিশীলতার ওপর কেন্দ্রীভূত রাখতে সহায়তা করবে।
রাজনৈতিক সম্প্রীতির ক্যাম্পেইন এর মূল লক্ষ্যসমূহ হলো— শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আচরণ উৎসাহিত করা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে যোগাযোগ আরও দৃঢ় করা, দলের ভেতরের বিভাজনগুলো সময়মতো সমাধান করা, নাগরিকদের মতামত ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া, শান্তির জন্য দৃশ্যমান ও জনসম্মুখে প্রতিশ্রুতি গড়ে তোলা, রাজনৈতিক সম্প্রীতি ও সহনশীলতা প্রচার করা।