ভিক্টোরিয়া কলেজ শিক্ষার্থীকে ভাড়াটে কিশোর গ্যাং দিয়ে মারধর।
কুমিল্লা প্রতিনিধি ।।
শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি, অর্থ আত্মসাৎ, সাংস্কৃতিক কর্মীকে ভাড়াটে কিশোর গ্যাং দিয়ে মারধর ও দলীয় ক্ষমতা দেখিয়ে কমিটিগঠনসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার সভাপতি রোবেল হোসেনের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষার্থী সালমা আক্তার (ছদ্মনাম) ও লোকমান হোসেন বাবু। গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু জাফর খান। অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রশাসন। অভিযুক্ত ভিসিটি’র সভাপতি রোবেল হোসেন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের নারী সদস্যদের যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলেও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে দিনদিন বাড়তে থাকে তার দৌরাত্ম। নিয়মিত অপকর্মের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মী নাইমুর রহমান ভূঁইয়াকে ১০-১৫ জন ভাড়াটে কিশোর গ্যাং দিয়ে মারধর করেন।
মারধরের শিকার নাইমুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমাদের এক নারী সদস্যকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করে আসছিলো বর্তমান সভাপতি রোবেল হোসেন। মেয়েটি আমার নিকট সহযোগিতা চাওয়ায় আমি উপদেষ্টা বরাবর লিখিত দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি এমন অজুহাত এনে আমাকে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টায় ফোন করে ডেকে নিয়ে ১০-১২ জন মিলে প্রচন্ড মারধর করেন। পুরো শরীরে আমি আঘাত প্রাপ্ত হই। আমার বুকের উপর পা তুলে মারে। গায়ের জামা কাপড় ছিড়ে যায়। জিলা স্কুলের সামনে থেকে মারতে মারতে আমাকে প্লানেট এস.আর শপিং কমপ্লেক্স এর একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর রোবেল হোসেন আমাকে নানাভাবে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে সদর সার্কেল পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ রানা এসে আমাকে উদ্ধার করেন। এখন আমার পড়াশোনা করা ও এই শহরে নিরাপত্তা নিয়ে আমি শঙ্কিত।
এদিকে নগরীর রানীর বাজারে কিশোর গ্যাংয়ের ভুল হামলার শিকার হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক তাবরীজ৷ ভাড়াটে কিশোর গ্যাংয়ের লক্ষ্য ভিক্টোরিয়ার শিক্ষার্থী নাইমুর রহমান ভূইয়া ছিলো কিনা তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা ও তদন্ত। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোতোয়ালি থানার কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকতা নিকট অভিযোগ করা হয়েছে যা এখন তদন্ত করা হচ্ছে।
রোবেল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সালমা আক্তার। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, আমি ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের একনিষ্ঠ কর্মী। ছোটবেলা থেকে সংস্কৃতির চর্চা করছি এবং ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির পরে থিয়েটারের সাথে যুক্ত হই। কিন্তু ২০২২ কার্যকরী কমিটির সভাপতি রুবেল হোসেন আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। শুধু তা-ই নয়, আমাকে মধ্যরাতে নাম্বারে এবং মেসেঞ্জারে মেসেজ, কল দিয়ে অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলতো এবং মহড়া কক্ষে গেলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদান করতো। আমি প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমাকে থিয়েটারে কোনো কাজে আর ডাকেনি, কোনো কাজে যুক্ত করেনি। যার ফলে আমি হীনমন্যতায় থিয়েটারে যাওয়া বন্ধ করি। এর ফলে আমার অনুপস্থিতিতে আমার নামে কথা নানা কথা ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়েছেন এবং অন্যরা এইসব নিয়ে হাসি-তামাশা করতো যা এখন আমার জন্য মানসিক কষ্টের কারণ। বিভিন্ন সময় আমি সিনিয়রদের নিকট অভিযোগ করে আসছি। তারা আমাকে স্যারদের নিকট অভিযোগের পরামর্শ দেন। যারা ওনার মন যুগিয়েছে তাদেরকেই পদ দেওয়া হয়েছে। আর আমরা যারা উনার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি তাদের কৌশলে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া তার অনৈতিক কর্মকান্ডে সংগঠনটি থেকে এ পর্যন্ত ১৮জন সদস্য পদত্যাগ করে। গতকাল ভিসিটি’র সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন বাবু তার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয় ও শিল্পকলা একাডেমির দেয়া মোট ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগপত্র জমা দেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রোবেল হোসেন বলেন, এখন ব্যস্ত আছি এসব বিষয় নিয়ে পরে আলাপ হবে। এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, আমাদের কলেজে নারী হয়রানি প্রতিরোধে একটি টিম কাজ করছে। এতোদিন কেউ অভিযোগ করেনি। এখন অভিযোগ পেয়েছি এবং তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাইমুর রহমান ভূঁইয়াকে মারধর করা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু কোন অভিযোগ পাইনি।
শান্ত/অননিউজ