কুমিল্লার দেবীদ্বারে বারো বছরের এক মাদ্রাসাছাত্রকে অমানুষিকভাবে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। গেল শনিবার (১এপ্রিল) পৌর এলাকার বড়আলমপুর গ্রামের ‘নূরে মদীনা রওজাতুল উলুম মাদ্রাসা’য় তারাবিহ নামাজের পর ওই ঘটনাটি ঘটে।
কথা হয়েছে স্থানীয়রা দুয়েক জনের সাথে। তারা জানায়, পৌর এলাকার বড়আলমপুর গ্রামের প্রবাসী আক্তারুজ্জামানের পুত্র, ‘নূরে মদীনা রওযাতুল উলুম মাদ্রাসা’র হেফজুল কোরান বিভাগের ছাত্র মো. জুবায়ের (১২) একটি গাছের পাতা দিয়ে ছবি বানিয়ে খেলা করছিল।
এসময় একই শ্রেণীর ছাত্র বিনাইপাড় গ্রামের সালাহউদ্দিনের পুত্র মো. সামিউল(১২) জুবায়েরের হাত থেকে পাতাটা নিয়ে গেলে এ নিয়ে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। ধস্তাধস্থির একপর্যায়ে দু’জনই মাটিতে পড়ে যায়।
এসময় জুবায়েরের পায়ের আঘাতে সামিউল এর বাম চোখে আঘাত প্রাপ্ত হয়। ওই ঘটনায় সামিউল বাড়িতে এসে তার বাবার কাছে নালিশ করলে, শনিবার রাতে তারাবিহ নামাজের পর সামিউলের বাবা লোকজন নিয়ে মাদ্রাসায় হাজির হয়ে বড়হুজুরের নিকট বিচার দাবী করলে, বড়হুজুর কর্তৃক ওই মারধরের ঘটনা ঘটে।
আহত জুবায়ের জানায়, বড়হুজুর আমার বুকের উপর পারা দিয়ে ২টি জিংলার বেত দিয়ে পিটিয়ে সারা শরীর ফুলাজখম করে দিয়ে বলেন, এ কথা যেন পরিবারের কাউকে না বলি।
জুবায়েরের মা’ সাকিলা আক্তার। তিনি জানায় শনিবার ভোররাতে সেহেরী খেতে বাড়ি আসে। সে জানায় সেহেরী খাবেনা রোজা থাকবে। জিজ্ঞাসাবাদে জানায় হাতে ব্যাথা পেয়েছে। সকালে মাদ্রাসায় যেতে বললে জুবায়ের জানায় তার খারাপ লাগছে। তার হাতের ব্যাথা দেখতে যেয়ে দেখি শরীরে প্রচুর জ্বর, জামা খুলে দেখি সারা শরীরে বেতের আঘাতের খত। এ ঘটনা কেন জানায়নি জানতে চাইলে সে জানায় বড় হুজুর নিষেধ করছে। বিকেলে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ছেলেকে চিকিৎসা সেবা দেই।
পৌর ৪নং ওয়ার্ডের সহায়ক মো, সহিদুল ইসলাম। সে জানায়, মাদ্রাসার মোহতামিম এতো রুক্ষ বিচার না করে লঘু বিচার করতে পারতেন। তার পরও আমরা সালিসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিয়েছি।
নূরে মদীনা রওজাতুল উলুম মাদ্রাসা’র মোতামিম (বড়হুজুর) হাফেজ মাওলানা অভিযুক্ত ওবায়দুল হক নোমান। সে জানায়, তারাবিহ নামাজ শেষে মসজিদের বাহিরে অনেক লোকজন নিয়ে জুবায়েরের বিরুদ্ধে সামিউলের বাবা বিচার দাবী করেন। জুবায়েরের আঘাতে সামিউলের চোখ নষ্ট হয়ে যেত। এধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধ যাতে আর না করে তার জন্য ভয় দেখাতে এবং উপস্থিত লোকজনকে শান্ত করতে তাকে শাসন করেছি। শাসনটা এতো বড় হয়ে যাবে ভাবিনি।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর’র মুঠো ফোনে জানান, মাদ্রাসার হুজুর কর্তৃক শিক্ষক নির্যাতনের বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব। তবে এ বিষয়ে রাতেই খোঁজ খবর নেব।