শান্তুনু হাসান খান।।
তিন পাবর্ত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সবকয়টি উপজেলায় একসাথে না হলেও কয়েক ধাপে নির্বাচন সমাপ্ত করতে চায় সিইসি-স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে। এখানকার বাঙালী ও পাহাড়ী উপজাতিদের মধ্যে সোহার্দ্যপূর্ণ অবস্থায় সবাই মিলে মিশে কাজ করতে চাইছেন আগামী উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে। এর মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় তফসিল ঘোষণার পর পরই সাম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়ে চড়ে বসছেন।
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ শুরু থেকেই আছে। তবে বেশির ভাগ অভিযোগগুলো উঠে এসেছে খাগড়াছড়ি জেলার কয়েকটি উপজেলা থেকে। এখানে গুইমারা উপজেলা ব্যাতীত সবকটিতেই ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই আলোকে মানিকছড়িতে বর্তমান চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন সহ রয়েছেন রফিকুল ইসলাম ও আবদুল হামিদ। এখানে কোন উপজাতি প্রার্থী নেই। লাউয়াছড়ি, মহালছড়ি ও রামগড়ের বাঙালিদের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাচনে পাহাড়িরা সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন।
বাঙালী প্রার্থীদের মাঝে এখন থেকেই সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পাল্টা অভিযোগের মধ্যে দিয়ে নির্বাচনে প্রচারনা চলছে নিরবেই। মানিকছড়ি উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ এনেছেন সম্ভাব্য প্রার্থী, সাবেক বাটনাতলী চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন, চেয়ারম্যান জয়নাল আমার নেতাকর্মীদেরকে প্রতিনিয়ত নাজেহাল করে যাচ্ছে। হামলা মামলার মধ্যে দিয়ে আগামীতে আমাকে হত্যা করার হুমকিও প্রদান করেছেন।
এছাড়াও আমার নেতাকর্মীদেরকে ১৫/২০টি মিথ্যা মামলা জড়িয়ে দেওয়া হুমকিও প্রদান করেছন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং সুপরিকল্পিত আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার সামিল। কোন প্রকার প্রমাণ দিতে পারলে আমি অভিযোগ সত্য বলে গ্রহণ করবো।
৫৪ বছরে তারুণ্যের প্রতীক নিয়ে সাবেক বাটনাতলি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম বেড়ে উঠেছেন মানিকছড়িতে। পড়াশোনাটা এখানেই শুরু, এখানেই শেষ করেছেন। ছাত্রাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করতেন।
বর্তমানে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে আগে থেকেই তার একটি গ্রহনযোগ্যতা রয়ে গেছে। সেই আলোকে এবার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তিনি সবার আগে উঠে আসবেন বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।
এদিকে ৩ জন প্রার্থী সবাই বাঙ্গালী। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনকে ঘিরে এলাকার সাধারণ ভোটারদের অভিযোগের শেষ নেই। নির্বাচনী সহিংসতা করার পাঁয়তারা শুরু করেছেন। তার বিপক্ষে প্রার্থীদেরকে নাজেহাল করার জন্য প্রতিনিয়ত পোষ্টার ও ব্যানার ছিড়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেছেন। অপর দিকে বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ ও অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে স্থানীয় মানুষদের কাছ থেকে। চেয়ারম্যানসীপ করার সময়, টি.আর, কাবিখা, এলজিএসপি সহ বিভিন্ন বরাদ্দ ও সরকারি ভাতা প্রদানে অনিয়ম রয়ে গেছে। জন্ম নিবন্ধন নিয়েও বেশ আলোচিত তিনি।
এদিকে রফিকুল ইসলাম তার পোষ্টার ছেড়া অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আমার নেতাকর্মীদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকী প্রদান করে আসছেন জয়নাল আবেদীন। পাশাপাশি প্রাণ নাশেরও হুমকি দিচ্ছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, জিতলেও খুন করবো, না জিতলেও খুন করবো। এছাড়া প্রতিটি নেতাকর্মীকে ১০/১৫টি মামলা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের স্ত্রী- খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য, স্থানীয় নারী নেত্রী ও জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনা আক্তারকেও প্রতিনিয়ত নাজেহাল করে আসছেন। জয়নাল আবেদিন।
এ প্রসঙ্গে নতুন প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু ও অবাদ নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ জনগণের মেনডেট নিয়ে আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারবো। এ ব্যাপারে সরকারি প্রশাসনের শুভ দৃষ্টি কামনা করছি। নির্বাচিত হলে- এলাকার সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড তথা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল কনসেপ্টকে বাস্তবায়ন করে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মানে কাজ করার চেষ্টা করে যাবো আমার সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকেই। পাশাপশি যুব সম্প্রদায়কে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করবো আমার মাননীয় এমপি ও পার্বত্য জেলা বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় এবং তার পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যে থেকে এলাকায় কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছা রাখে। রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানকার উচ্চ শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি আমি সর্বপ্রথম মাথায় রাখবো। কেননা এখানকার ছেলেরা বাইক চালিয়ে রুটি রুজির বিষয়টা খুব কষ্টের। এ বিষয়টাকে প্রাধন্য দিবো। পাশাপাশি ভোকোশনাল ট্রেনিং ইনিষ্টিটিউট করে মানিকছড়িকে আরো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবো। রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, বিসিকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার অনেক সুযোগ আছে। এছাড়াও রয়েছে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাবার সুগম পথ।
মানিকছড়িতে বর্তমানে ৪টি ইউনিয়নে বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার। এর মাঝে সনাতন ধর্মী ৫ হাজার আর উপজাতি ভোটার প্রায় ১৫ হাজার বাকীগুলো সব বাঙ্গালি ভোটার।
পরিশেষে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবর্তনের লক্ষ্যে টেকসই মাধ্যমে আধুনিক মানিকছড়ি আধুনিক ডিজিটাল উপজেলা নির্মাণ করতে চাই। পাশাপাশি জনগণের অধিকার নিশ্চিত করবো। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই আর চাঁদাবাজির মতোন অসামাজিক কাজগুলো পরিবর্তন আনতে চাই। এতে জনগনের সহযোগিতা কামনা করি এবং ভোটের দিন সুষ্ঠভাবে ভোট প্রয়োগ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। কেননা এবার জন নেত্রী শেখ হাসিনা আগেই ঘোষনা দিয়েছেন, দলীয় প্রভাব ও মার্কা ছাড়া যার যার যোগ্যতায় উঠে আসবে জনগণের প্রতিনিধি হয়ে।
এইদিকে পাহাড়ী জনপদে উপজাতিদের আলাদা একটি ফোরাম রয়ে গেছে দীর্ঘদিন থেকেই। সেই থেকেই তারা একাট্টা হয়ে থাকে তাদের স্বজাতিদের প্রতি। এলাকার হেডম্যান ও কারবারীরা নিজেদের মধ্যে সমঝতা করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যান। এখানে বাঙালীদেরকে খুব একটা গণ্য করেন না। ভোট চাইতে গেলে হাসিমুখে তারা সবাইকে বলেন- ভোট দিয়ুম। নো চিন্তা করিবা.......