সাইফুল ইসলাম , কুমিল্লা।।
কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায় রোহিঙ্গা যুবককে জন্ম-সনদ প্রদানের অভিযোগে মুরাদনগর ১৩নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইসমাইল হোসেন ও নকীব মোহাম্মদ নছরুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। বুধবার (১৯ই জুন) সন্ধ্যায় মুরাদনগর থানার বাখরগঞ্জ বাজার থেকে নছরুল্লাহকে ও বৃহস্পতিবার (২০ই জুন) ইউপি সচিব ইসমাইল হোসেনকে কোম্পানীগঞ্জ-মুরাদনগর সড়কের নিমাইকান্দি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেশ বড়ুয়া।
জানা যায়, গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে মুরাদনগর উপজেলার পশ্চিম ঘোড়াশাল ৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন ও হাসিনা বেগমের ছেলে হিসেবে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্ট করতে আসেন ইয়াছির নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। এই সময় রোহিঙ্গা হিসেবে সন্দেহ হলে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা তার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি। পরে তাকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে, ১৬ই ফেব্রুয়ারী এ ঘটনায় কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করে গোয়েন্দা পুলিশ। মামলার রুজুর পর রোহিঙ্গা যুবক কীভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেছে এ বিষয়টির তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ।
রোহিঙ্গা যুবক ইয়াছিরের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে উঠে আসে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনসহ পাসপোর্ট তৈরিতে সহযোগিতাকারী চক্রের সদস্যদের নাম। গ্রেফতার করা হয় রোহিঙ্গা যুবক ইয়াসির(১৯), শরিফ, মোশাররফ, হাসান মাহমুদসহ মোট ৪ জনকে।
ঘটনার ২০ দিন আগে ঐ রোহিঙ্গা যুবক মিয়ানমার বলিবাজার নামক স্থান থেকে সে কক্সবাজার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসে। মিয়ানমারে বলিবাজারে থাকা তার চাচাতো ভাই ওসমান কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন মদিনা ট্রাভেলসের হাসান মাহমুদ ও মোশাররফসহ নাছরুল্লাহ, শরিফ দালালের কাছে পাসপোর্ট করে দিবে বলে কন্টাক্ট করে। রোহিঙ্গা ইয়াছিরের সব কাগজপত্র হাসান মাহমুদ ও মোশাররফ তৈরি করে দেয়।
এ মামলায় প্রায় চার মাস পর গত ১৯জুন বুধবার সন্ধ্যায় এ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় নছরুল্লাহকে। বৃহস্পতিবার ২০জুন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে সে। তার দেয়া জবানবন্দিতে বের হয়ে আসে আরোও চাঞ্চল্যকর তথ্য। মদিনা টুরস এন্ড ট্রাভেলসের মালিক হাসান মাহমুদ রোহিঙ্গার ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের তৈরি করে দেয়ার জন্য নাছরুল্লাহকে জানায়। তারপর হাসান মাহমুদ ও নাছরুল্লাহ মিলে ইউপি সচিব ইসমাইলের সাথে কথা বললে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে জন্ম নিবন্ধন করে দেয়। এছাড়াও জানায় এর আগেও ৫ টি ভুয়া রোহিঙ্গা জন্ম নিবন্ধন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মো তুফরীজ ও ইউপি সচিব ইসমাইল হোসেনের মাধ্যমে। রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরির কাজে মুরাদনগর উপজেলার ১৩ নং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কাজী মো: তুফরীজ জড়িত আছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় নছরুল্লাহ।
নছরুল্লাহ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০ জুন বৃহস্পতিবার রাতে ইউপি সচিব ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভূয়া জন্ম নিবন্ধন করে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে সে। তাছাড়া পূর্বেও একইভাবে ৫০হাজার থেকে ১লাখ টাকার বিনিময়ে ৫/৬ টি ভূয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ করে দিয়েছে বলেছে সে জানায়।
রোহিঙ্গাদের ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করে দেয়ার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি কুমিল্লা ১৩ নং মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী মো: তুফরীজ অস্বীকার করে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের সার্ভার হ্যাক হয়েছিল। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আর আমার ইউপি সচিব যদি জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাজেশ বড়ুয়া জানান, রোহিঙ্গা যুবককে জন্মনিবন্ধন দেওয়ার মামলায় সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ইউপি সচিব ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
এমন ঘটনায় মুরাদনগর ইউএনও সিফাত উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত সরকারি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।