অ্যানেস্থেসিয়া ও সিজার এর সময় নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু
নড়াইল প্রতিনিধি:
নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রত্যাশা ক্লিনিকে সিজারের সময় শান্তা (২৩) নামে একজন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। অ্যানেস্থেসিয়া ও সিজার একজন চিকিৎসককে দিয়ে করানোর কারনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে ভূক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ। ঘটনার পর ওই চিকিৎসককে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
জানাগেছে, লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের সরুশুনা গ্রামের ইকবাল হোসেনের মেয়ে শান্তাকে গত সোমবার (১২ আগষ্ট) সন্ধ্যায় লোহাগড়ার জয়পুর মোড়ে প্রত্যাশা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। শান্তার মা লাভলী বেগম জানান, ভর্তির কিছুক্ষণ পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ শান্তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এসময় মিথুন বিশ্বাস নামে একজন চিকিৎসক নিজেই অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে সিজার করে। সিজারের পর একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু কয়েকঘন্টা কেটে গেলেও শান্তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করেনি। বার বার শান্তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান ভালো আছে। এক পর্যায়ে জানানো হয়, শান্তা একটু অসুস্থ্য তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে এ্যাম্বুলেন্সযোগে নড়াইলে নেয়া। এ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার পথে তার শরীরে পুশ করা স্যালাইন একটুও যাচ্ছিলো না। তখন ওরা স্যালাইন চেপে ধরে শরীরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার সময় শান্তার শরীর একটুও নড়েনি। শান্তা ভুল অপারেশন করে ওরা অনেক আগেই অপারেশন থিয়েটারে মেরে ফেলেছে।
শান্তার মামা মুস্তাক অভিযোগ করেন ‘‘ ক্লিনিকের মালিক সেলিম খরচ বাচানোর জন্য কোন অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার না এনে অনভিজ্ঞ ডাক্তার মিথুন বিশ্বাসকে দিয়ে অজ্ঞানের ইনজেকশন দিয়ে তাকে দিয়েই সিজার করেছে। যার কারনে ভুল অপারেশনে তার ভাগ্নির অকাল মৃত্যু হয়েছে। মুস্তাক বলেন ‘আমরা পরে বুঝতে পেরেছি যে আমার ভাগ্নি অপারেশন থিয়েটারেই মারা গেছে। কিন্তু আমাদের বোকা সাজানোর জন্য তারা মৃত অবস্থায় শান্তাকে স্যালাইন লাগিয়ে ক্লিনিক থেকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। হাসপাতালে আসার সময় ওই ডাক্তারকেও সাথে নিয়ে আসি। পরে ডাক্তার পালানোর চেস্টা করলে আমরা আটক করে রাখি। আমরা এই ডাক্তারসহ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।’
শান্তার আরেক মামা শামিম আহম্মেদ বলেন ‘ডাক্তার মিথুন বিশ্বাস সার্জারী বা গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না। তিনি এমবিবিএস পড়েছেন কিন্তু বিসিএস এ টিকতে পারেনি। তার মতো একজন অনভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সিজার করে অকালে একটি মেয়েকে মেরে ফেলেছে। শান্তার এটি প্রথম বাবু। প্রত্যাশা ক্লিনিকটসহ এমন অসংখ্য ক্লিনিক রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ছাত্র-জনতার এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি ’নড়াইল সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মোঃ আসিফ আকবর বলেন,‘ শান্তা নামের ওই রোগীকে মৃত অবস্থায় নড়াইল সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে আনা হয়েছিলো। হাসপাতালে আসার অন্তত আধাঘন্টা আগে মারা গেছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করতে হলে ময়নাতদন্ত করতে হবে।
নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন ‘লোহাগড়ায় একটি ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় মিথুন দাস নামে একজন ডাক্তারকে হাসপাতাল থেকে থানায় এনে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার লোহাগড়া থানায় মামলা করলে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায়। পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, ৩ বছর আগে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে এসএম নাঈমুর রহমানের সাথে শান্তার বিয়ে হয়। নাঈমুর ঢাকায় একটি বেসরকারী কোম্পানীতে চাকুরী করে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শান্তার পিতার বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার সরুশুনা গ্রামে জানাযার নামায শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।