কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙ্গনে বাড়ীঘর হা‌রি‌য়ে নিঃস্ব মানুষজন, প্রতিকারে নেই কোন উদ্যোগ।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।।

কু‌ড়িগ্রা‌মের চিলমারী‌তে ব্রহ্মপুত্র ন‌দের ভাঙ্গন তাণ্ডব যেন কিছু‌তেই থাম‌ছে না।থেমে থেমে গ্রাস কর‌ছে বসতবা‌ড়ি, নিঃস্ব হ‌চ্ছে ন‌দের তীরবর্তী অসহায় মানুষগুলো। ভি‌টেমা‌টি হারা‌নো এসব মানু‌ষের নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই।
ভাঙন রো‌ধে দ্রুত পদ‌ক্ষেপ নেওয়ার দা‌বি সেখানকার বা‌সিন্দা‌দের।গত ১০/১৫ দিন থেকে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে এবং ভেঙেই যাচ্ছে ঘরবাড়ি গাছপালা সহ আবাদী জমি।

খোঁজ নিয়ে জানা গে‌ছে, উপ‌জেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ারখাতা এবং চিলমারী ইউনি‌নের চর শাখা‌হা‌তি এলাকায় গত ১০/১৫ দিনের ব‌্যবধা‌নে দেড় শতা‌ধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হ‌য়ে গে‌ছে। ভাঙ‌নের কব‌লে প‌ড়ে‌ছে আবা‌দি জ‌মি, গ্রামীণ সড়কসহ বি‌ভিন্ন স্থাপনা। ত‌বে ভাঙ্গন ঠেকাতে চোখে পরার মত তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননী পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এলাকাবাসীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, উপ‌জেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরাদিয়ার খাতা এলাকায় গত ১০/১৫ দিনে অন্তত ১০০ বসত‌ভিটা নদী গ‌র্ভে চ‌লে গে‌ছে। হুম‌কির মু‌খে প‌ড়ে‌ছে ওই এলাকায় আবাদি জমি, বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা। গত বছর এই এলাকায় ৪০০ পরিবার বাস্তুহারা হ‌য়ে‌ছেন ব‌লেও জানান তারা।

ভাঙনের শিকার আরো অনেকে জানান, আমরা কয়েক বছর থেকে এই চরে বসবাস করে আস‌ছি। গত বছরও এখানে ব‌্যাপক ভাঙ‌তে শুরু হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবারও নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছি। এই চ‌রে ক‌য়েকশ প‌রিবার বসবাস ক‌রে। আমরা চাই দ্রুত চরটা বেঁধে আমা‌দের বসবা‌সের সু‌যোগ ক‌রে দেওয়া হোক।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, নদের পানি একটু কমায় ভাঙন শুরু হয়ে যায়। বেশ কয়েকদিন থেকে শতা‌ধিক বাড়িঘর ভাঙছে, আমার নিজের বাড়িও নদীর পাড়ে তাই সরায় নিয়েছি। আমরা ৩৫ বছর থেকে এই চরে বসবাস করি। ভাঙনের ফলে আমাদের এই চর থে‌কে অন্য চ‌রে যে‌তে হচ্ছে ব‌লে জানান তিনি।

এদি‌কে চিলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত চর শাখাহা‌তি গ্রা‌মে তীব্র ভাঙন দেখা দি‌য়ে‌ছে। এতে অর্ধ শতা‌ধিক বসত‌ভিটা নদী‌তে চ‌লে গে‌ছে। ভাঙ‌নের শিকা‌র এসব মানুষ বি‌ভিন্ন চর ও দীপ চ‌রে গি‌য়ে আশ্রয় নিচ্ছে।

স্থানীয় বা‌সিন্দা বিপুল মিয়া, হারুন মিয়া, শাহজাহান আলী বলেন , ব্রহ্মপূত্র নদ বেষ্টিত কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত চর শাখাহাতি। এই গ্রামগুলোর চারদিকে ঘিরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। গত ৩৫ বছর ধরে এই গ্রামে লোকজন বসবাস করে আসছেন। চলতি বছরে তীব্র ভাঙনের ফলে গ্রামটি মানচিত্র থেকে বিলিন হওয়ার পথে। এখানকার মানুষের অব‌শিষ্ট বাড়িঘর, আবাদি জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রহ্মপত্র নদের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাথা গোজার ঠাই হারিয়ে যাচ্ছে, আমরা কোথায় যাবো।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যে ৫০-৬০টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সবুজ কুমার বসাক ব‌লেন, গত শ‌নিবার পা‌নি উন্নয়ন বোর্ড‌কে বিষয়‌টি জা‌নি‌য়ে‌ছি। বিষয়‌টি নি‌য়ে পাউবোর সাথে সরাস‌রি কথা বলব।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান ব‌লেন, চর শাখাহাতিতে কিছু জিও ব্যাগ ডা‌ম্পিং করার প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তা ডাম্পিং করাও হবে।

আরো দেখুনঃ