কুষ্টিয়ার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধে ধস, আতঙ্ক
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি।।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষাবাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহে পদ্মাপাড়ের শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি এলাকায় প্রায় ১৩০ মিটার বাঁধ ধসে গেছে। তবে এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বা সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। এখন পর্যন্ত বাঁধ রক্ষায় নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। এদিক, বাঁধে ধসের ঘটনায় আতঙ্কিত পদ্মাপাড়ের মানুষ। ঝুঁকিতে পড়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি ও আশপাশের এলাকা।
স্থানীয়রা বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকে অভিযোগ ছিল। ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জুন অসম্পূর্ণ প্রকল্পকে সম্পূর্ণ দেখিয়ে কাগজে-কলমে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের নির্ধারিত পরিকল্পনাসহ নকশা লঙ্ঘন, অর্থ অপচয় এবং বরাদ্দকৃত টাকা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি বর্তমানে ধ্বংসের মুখে। এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। ধস ঠেকানো না গেলে কুঠিবাড়িসহ আশপাশের ফসল জমি, মাঠ, ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে।
পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি রক্ষার জন্য ৩ দশমিক ৭২০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ না হতেই ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর বাঁধে প্রথম ভাঙন দেখা যায়। সে সময় বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
সূত্র আরও জানায়, এবার আবার শুকনা মৌসুমে কোমরকান্দি এলাকায় ১৩০ মিটার বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কুঠিবাড়িসহ আশপাশের বিশাল জনপদ। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পদ্মাপাড়ের মানুষ।
এ বিষয়ে কোমরকান্দি গ্রামের হাসান বলেন, সপ্তাহখানেক আগে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। নির্মাণের সময় পাইলিং কাজে অনিয়ম থাকায় অসময়ে বাঁধ ধসে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় কৃষক আলম বলেন, কাজে অনিয়ম থাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন ঠেকানো না গেলে কুঠিবাড়িসহ আশপাশের এলাকার কৃষিজমি, ফসল, ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে।
হাবিবা বেগম বলেন, শেষ আশাটুকুও ভেঙে গেল। ব্যাটারা কাজে ফাঁকি দিছে। টাকা মারে খাইছে। এখন আমরা দিশেহারা।
কলেজছাত্রী সুলতানা বলেন, ‘এ বাঁধ দিয়েই নিয়মিত কলেজে যাওয়া আসা করি। নির্মাণকাজে ত্রæটি থাকায় ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙনরোধ করা দরকার।’
কুঠিবাড়ির কাস্টডিয়ান মখলেসুর রহমান বলেন, ঢাকায় ট্রেনিংয়ে আছি। এটা আমাদের কাজ নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যাপার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে দৃশ্যমান কোনো কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনো শুরু করেনি।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবছার উদ্দিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।