গরুর দালাল থেকে সিন্ডিকেট প্রধান নীলফামারী রেজিস্ট্রি অফিসে সাধারণ মানুষ দিশেহারা

নীলফামারী প্রতিনিধি:

জেলা রেজিস্টার অফিস ও উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসগুলোতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে পৌঁছেছে। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী ও নকল নবিশদের গড়ে তোলা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সেবাগ্রহীতারা। দলিলের নকল (জাবেদা) তোলা থেকে শুরু করে জমি নিবন্ধন, প্রতিটি ধাপে দিতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত ফির কয়েক গুণ অতিরিক্ত অর্থ।
​জাবেদা ও সার্চিং ফি’র নামে প্রকাশ্য চলছে লুটতরাজ।

​অনুসন্ধানে জানা গেছে, নীলফামারী জেলা সদরসহ ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর, চিলাহাটি ও মীরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জাবেদা বা নকল উত্তোলনের নামে চলছে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি। সাধারণত ১০ পাতার একটি দলিলের সরকারি খরচ ১ হাজার টাকার আশেপাশে হলেও এই সিন্ডিকেট সার্চিংয়ের নামেই নিচ্ছে ৫০০ টাকা যা সম্পূর্ণই নিয়ম বহির্ভূত।
এছাড়া পুরো দলিলের নকলের জন্য ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে।

​ভুক্তভোগী কচুকাটা ইউনিয়নের মোঃ আব্দুল খালেক আক্ষেপ করে বলেন, “তিন মাস ধরে একটি জাবেদার জন্য ঘুরছি। তারা প্রথমে সার্চিংয়ের জন্য ৫০০ টাকা নিয়েছে এবং পরে ৩ হাজার টাকায় কন্টাক্ট করেছে। আমি ২ হাজার টাকা অগ্রিম দিলেও এখনো কাগজ হাতে পাইনি।”
​চড়াই খোলা ইউনিয়নের আবুল কালাম অভিযোগ করেন, “সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দোতলায় জাবেদার জন্য ২ হাজার টাকা এবং চারতলায় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়। অথচ এই অতিরিক্ত টাকার কোনো রসিদ দেওয়া হয় না। সিন্ডিকেটের নির্ধারিত রেট না দিলে কাজ হয় না।”

​নেপথ্যে ফ্যাসিস্ট আমলের রাজনৈতিক নিয়োগের ​অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯-২০ সালে একই স্মারকে তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালী এমপি আসাদুজ্জামান নূরের সরাসরি হস্তক্ষেপে নীলফামারী জেলায় প্রায় দুই শতাধিক নকল নবিশ নিয়োগ দেওয়া হয়। অবৈধ এই নিয়গে বিপুল অংকের অর্থের লেনদেন করেন নকল নবীসের পলাতক সাবে সভাপতি হর্স রায়। এই বিশাল বাহিনীকে মূলত রাজনৈতিক ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। অভিযোগ উঠেছে, নকল নবিশ আনারুল ও এমদাদুল এই চক্রের প্রধান। নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে একজন নকল নবিশ জানান আনারুল এক সময় গরুর দালানি করতেন, কিন্তু এখন তিনি পুরো অফিসের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। চাহিদামতো টাকা না দিলে আবেদনপত্র বাতিল বা ফাইল দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখাই তাদের প্রধান অস্ত্র।

নকল নবিস আনারুল ও এমদাদুল সিন্ডিকেটের টাকা ভাগ বাটোয়ারার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ার একটি ভিডিও এবং অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে নকল নবীশ আনারুল ও এমদাদুল বলেন যা হবার হয়েছে এগুলো আর হবেনা।

​জনমনে ক্ষোভ ও প্রশাসনিক নিস্তব্ধতা
​দীর্ঘদিন ধরে এই অরাজকতা চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ভুক্তভোগীদের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাসোহারা দিয়ে এই সিন্ডিকেট মুখ বন্ধ করে রেখেছে। সাধারণ মানুষ অবিলম্বে এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল এবং অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

​ অনিয়মের বিষয়ে নীলফামারী জেলা রেজিস্ট্রার এস এম সোহেল রানা মিলনের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এক প্রকার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আর্কাইভ ডিজিটাল হবে না, ততক্ষণ এই সিন্ডিকেট ঠেকানো মুশকিল।”

নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো:নাইরুজ্জামান মুঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

​তবে ভুক্তভোগী নীলফামারীবাসীর দাবি, ডিজিটাল হওয়ার অজুহাতে বছরের পর বছর দুর্নীতি চলতে পারে না। তারা অবিলম্বে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।

আরো দেখুনঃ