গাঁজা খাওয়ার পর হঠাৎ করে সব স্মৃতি ফিরে এল, নোবেলজয়ী মালালা
অনলাইন ডেস্ক।।

নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মালালা ইউসুফজাই নিজের মানসিক সংগ্রামের কথা জানালেন খোলাখুলি। তিনি জানান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গাঁজা খাওয়ার এক রাত তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় ১৩ বছর আগের সেই ভয়ংকর মুহূর্তে, যখন তালেবানরা তাকে গুলি করেছিল। নিজের নতুন আত্মজীবনী ‘ফাইন্ডিং মাই ওয়ে’ প্রকাশের আগে দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ২৮ বছর বয়সী মালালা।
২০১২ সালে মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলার কারণে পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় স্কুলবাসে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলি করেন এক মুখোশধারী তালেবান বন্দুকধারী। ওই সময় প্রাণঘাতী অবস্থায় তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। মালালা বলেন, ‘আমার মস্তিষ্ক পুরো ঘটনাটা ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু সেই রাতে গাঁজা খাওয়ার পর হঠাৎ করে সব স্মৃতি ফিরে এল।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন সবকিছু বদলে গেল। আমি কখনও এত কাছে গিয়ে সেই আক্রমণটাকে অনুভব করিনি। মনে হচ্ছিল আমি আবারও সবকিছু দেখছি, যেন আমি মারা গিয়েছি আর পরজগতে আছি।’
গাঁজা খাওয়ার পর ঘরে ফেরার পথে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বন্ধুরা তাকে কোলে করে নিয়ে যায়। তারপর মনে পড়তে থাকে সেই দিনগুলোর ভয়াবহ দৃশ্য—‘বাস, মানুষ, বন্দুক, রক্ত’। মালালা বলেন, ‘কোনো জায়গা ছিল না পালানোর, নিজের মনের ভেতর থেকেও না।’
এর পর থেকে তিনি আতঙ্ক, ঘুমহীনতা ও উদ্বেগে ভুগতে থাকেন। ঘাম, কাঁপুনি আর দ্রুত হৃদস্পন্দনের মতো শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। থেরাপিস্ট পরে জানান, তার এই মানসিক কষ্টের মূল কারণ ছিল গুলির ঘটনার মানসিক আঘাত, তালেবান শাসনে শৈশবের ভয়, আর পড়াশোনার চাপ।
থেরাপিস্টের সহায়তায় মালালা ধীরে ধীরে নিজের ভয় ও স্মৃতিগুলোর মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমি তো বেঁচে গেছি, কিছুই আমাকে ভয় দেখাতে পারবে না। কিন্তু ছোট ছোট জিনিসেও ভয় পেতে শুরু করলাম, আর তাতেই আমি ভেঙে পড়লাম। পরে বুঝলাম, আসলে সাহস মানে শুধু বাইরের বিপদের সঙ্গে লড়া নয়, নিজের ভেতরের ভয়কেও জেতা।’
মালালা জানেন, গাঁজা খাওয়ার এই অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলায় সমালোচনা হতে পারে। তবে তিনি এসবের জবাব দেবেন না। তার নতুন বইয়েই পাঠক সব উত্তর পাবেন বলে জানান তিনি।
‘আই অ্যাম মালালা’-এর পর প্রকাশিত হতে যাওয়া এই বইয়ে নিজের প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের নানা অধ্যায় তুলে ধরেছেন তিনি। এতে রয়েছে তার স্বামী পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যানেজার আসার মালিকের সঙ্গে জীবন এবং তাদের নতুন উদ্যোগ ‘রিসেস’-এর কথা, যেখানে নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ বাড়ানোর কাজ করছেন তারা।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
আই/অননিউজ২৪।।