তিন বছরেও শাবাৎ হত্যা রহস্য উদঘাটন হয় নি, মৃত্যুর আগে ছেলের খুনীদের দেখে যেতে চান শিক্ষক মা
মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা।
আজ তিন বছর আমি ঘুমাতে পারি না। খেতে পারছি না। মোবাইলে ছেলের ছবি দেখি আর চোখের পানি ফেলি। আমার সময় যায় না। কখন যেন মরে যাই জানি না। আমার সারা জীবনের একটি চাওয়া আমার ছেলের খুনিরা যেন ধরা পরে। আমি জানতে চাই আমার ছেলেকে তারা কেন খুন করেছে। কি দোষ ছিলো আমার কোলের সন্তানটার।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারী সকালে গোমতীনদী থেকে শাবাৎ খানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিন বছর পার হলো। এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে শাবাৎ খানের খুনিরা।
নিহত শাবাৎ খান কুমিল্লা নগরীর বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা ডাঃ লিয়াকত আলী খান ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রাফিয়া আক্তার ডেইজির ছোট ছেলে।
কুমিল্লা মহিলা কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষ বলেন, ‘গুনে গুনে তিন বছর পার হলেও এখনও শনাক্ত হয়নি শাবাৎ এর খুনিরা। কত তথ্য-উপাত্ত দিলাম, তবুও পুলিশ কেন খুনিদের ধরতে পারছে না। তিন বছর ধরে রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারিনি। প্রতিদিন রাতে কান পেতে থাকি। মনে হয়, এই বুঝি শাবাৎ এসে ডাকল, আম্মা দরজা খোল।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আসবে না জেনেও প্রতীক্ষায় আছি। ওরা আমার ছেলেটাকে নির্মমভাবে মেরে ফেলল। কবে ধরা পড়বে খুনিরা। মৃত্যুর আগে যদি শুনে যেতে পারতাম আমার ছেলেকে কেন তারা খুন করেছে, তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।’
একমাত্র বোন শারমিন খান বলেন, আমার আদরের ছোট ভাই শাবাৎ ছিলো আমাদের পরিবারের প্রান। আজ তিন বছর আমাদের বাড়িটা প্রানহীন হয়ে আছে। আমাদের বাড়ির বাইরটা ধবধবে সাদা। বাড়ির ভেতরের বাসিন্দাদের হৃদয় রক্তাক্ত। আমরা আজো জানি না এমন কোন অপরাধের কারনে নির্মমভাবে আমার ভাইটাকে খুন করা হলো। আজও আমার ছেলেটা শাবাতের রুমে গিয়ে মামা বলে ডাকে। এমন দৃশ্য সহ্য করা কষ্টের।
ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত মা ডেইজি বারবার স্মৃতিচারণা করেন সেই দিনের নানা ঘটনার। বলেন, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি শাবাৎ। বের হওয়ার সময় মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ কিছুই নেননি। ছিল শুধু চাবির রিং। পরদিন ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি সকালে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারি, ছেলের মরদেহ ভাসছে গোমতী নদীতে।
শাবাৎ খানের বাবা ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ২০২০ সালের ১২ মার্চ শাবাৎ খানের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসে। যেখানে উল্লেখ আছে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে শাবাৎকে। সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার পরও আসামিদের ধরতে পারছে না পুলিশ। আমার প্রশ্ন কেন পারবে না পুলিশ খুনিদের ধরতে।
শাবাতের বাবা লিয়াকত আলী খান বলেন, ঘটনার পরদিন অর্থ্যাৎ ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি ১০ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উপপরিদর্শক শাহীন কাদির।
১০ দিন পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই)তে মামলার হস্তান্তর করা হয়। তখন মামলার মামলার তদন্ত করেন কুমিল্লা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মতিউর রহমান। মতিউর বদলী হওয়ায় মামলা তদন্ত করেন পরিদর্শক মাহফুজ। তিনিও বদলী হওয়ায় বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পরিদর্শক মফজল খান।
তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তণ হলেও খুনিদের আটকের কোন কূল কিনারা পাচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সবাই শুধু আশ^াস দিচ্ছেন।
মামলার বর্তমান কর্মকর্তা মফজল আহমেদ খানও কোন আশার বানী শুনাতে পারেন নাই। পুলিশ কর্মকর্তা মফজল আহমেদ খান বলেন, মাসখানেক হলো আমি মামলাটির দায়িত্বভার পেয়েছি। শাবাত খানকে হত্যা করা হয়েছে এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে এই খুনের কোন ক্লু পাচ্ছি না। পরিবারের সদস্য এবং আশেপাশের লোকজনও কিছু বলতে পারছে না। শাবাৎ যে দিন খুন হয় সে দিন সে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে বের হয় নাই। এ মুহুর্তে আর কিছু বলতে পারছি না।