নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে ঘেরাও ও প্রতিবাদ কর্মসুচি পালিত
বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমনকে দ্রæত অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে ঘেরাও ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
শুক্রবার (১৫মার্চ) বেলা ১০টার দিকে নড়াইল জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসারের স্বেচ্ছাচারীতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে বীরমুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিককর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার দুই শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ সহকারে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে প্রবেশ করে। এসময় প্রায় ঘন্টাব্যাপী ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।
এসময় প্রতিবাদ সমাবেশে সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের সভাপতি মলয় কুমার কুন্ডু, সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রওশান আরা কবীর লিলি, শামীমুল ইসলাম টুলু, ইমান আলী মিলন সহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, শিল্প ও সংস্কৃতির জেলা নড়াইল। জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে যোগদানের পর থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সাথে জড়িত। গত এক বছরে এই দূর্নীতিবাজ অফিসার বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, অডিটোরিয়াম সংস্কারের নামে প্রায় ৫০ লাখ টাকার দূর্নীতি করেছে। শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক-কর্মচারিদের অপমান ও শিল্পকলা থেকে বের করে দিয়েছে। গত ১০ দিন শিল্পকলা একাডেমীতে কোনো ক্লাস হয়না। এর আগে তিনি ময়মনসিংহ, চুয়াডাঙ্গা জেলায় দূর্নীতির কারণে তাকে তাড়ানো হয়েছে। এই আন্দোলন একটি প্রগতিশীল সমাজকে বাঁচানোর আন্দোলন। স্বেচ্ছাচারি এই দূর্নীতিবাজ অফিসার আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে নড়াইল ছেড়ে চলে না গেলে শিল্পকলা একাডেমী তালা মেরে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে যোগদানের পর থেকে এভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পী, বিচারক ও কলাকুশলীদের জন্য সরকারি নির্ধারিত সম্মানি দেন না। অনুষ্ঠনের জন্য যে বরাদ্দ থাকে তার চার ভাগের একভাগও খরচ করেন না। এছাড়া শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীতের বিভিন্ন শাখার ক্লাস চলাকালীন সময়ে কালচারাল অফিসার সংগীত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে থাকেন। গত বছরের মাঝামাঝি জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের লাইটিং, সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারে ১০ লাখ টাকার কাজ হলেও অভিযোগ রয়েছে, এ কাজে খাতা-কলমে টেন্ডার দেখিয়ে মূলত নিজেই কাজ করেছেন। এ পর্যন্ত এই দূর্নীতিবাজ অপিসার নড়াইল থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আতœসাৎ করেছে।
এসব অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নড়াইলের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে অনিয়ম,দূর্নীতি ও দুর্বব্যবহারের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেয় নড়াইলের ৩২জন সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ব্যবসায়ী। কালচারাল অফিসারের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতি তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়ায় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবের কাছে গত ৬ ফেব্রæয়ারী একটি প্রতিবেদন পাঠালে অপসারণ বা শাস্তি দূরের কথা একই ধরণের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া গত সপ্তাহে জেলার সাংস্কৃতিকর্মীরা জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সাথেও দেখা করেছেন।
এ ব্যাপারে জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান বলেন,‘ আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
’
নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন,‘ সম্প্রতি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করি এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
এফআর/অননিউজ