নড়াইল বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৫৩ তম শাহাদত বার্ষিকী পালিত

নড়াইল প্রতিনিধি ।।

স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫৩তম শাহাদত বার্ষিকী জন্মস্থান নড়াইলে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ) কর্মসুচির মধ্যে ছিলো কোরআন খানি, শহীদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান, দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরণ।

নড়াইল জেলা প্রশাসন ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাষ্টের আয়োজনে সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের নূর মোহাম্মদ নগরে স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন নড়াইল জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সদর উপজেলা প্রশাসন, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্ট, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মহাবিদ্যালয়, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন।
শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে পুলিশের একটি চৌকষ বাহিনী রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এসময় দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে একটি শোক র‌্যালী বের হয়ে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহম্মদ শেখ স্মৃতিস্তম্ভে এসে শেষ হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মোঃ মনিরুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এস,এ, মতিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ দোলন মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জুবায়ের হোসেরন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আরাফাত হোসেন প্রমুখ।
এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা, বীরমুক্তিযোদ্ধা, নূরমোহম্মদ শেখের পরিবারের সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শাহাদতবরণ করেন। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা, মতান্তরে জেন্নাতা খানম। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান তিনি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।
নূর মোহাম্মদ ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন। বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (বিজিবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই বাহিনীতে দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করার পরে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন তিনি। পরবর্তীতে ল্যান্স নায়েকে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এস এ মঞ্জুর। নূর মোহাম্মদ যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নের্তৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ শত্রæমুক্ত করেন।

মহান এই বীরের জন্মস্থান মহিষখোলা গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ নূর মোহাম্মদ নগর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরী নূর মোহাম্মদ নগরের উদ্বোধন করেন। এরপর উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যায় নূর মোহাম্মদ নগর। তার স্মৃতিরক্ষার্থে নূর মোহাম্মদ নগরে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’, স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্কুল ও কলেজ। এছাড়া নড়াইল শহরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্টেডিয়াম এবং নড়াইল ও যশোর শহরে সন্তানদের জন্য বাড়ি।
এদিকে, ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর নূর মোহাম্মদ শেখের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা (৮০) বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। নূর মোহাম্মদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে নড়াইল এবং যশোর শহরে বসবাস করেন।

আরো দেখুনঃ