পঞ্চগড়ে ২২ বছর পর নিখোঁজ মাকে ফিরে পেলো সন্তান
পঞ্চগড় প্রতিনিধি।।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের বোদাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাজেদা খাতুন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গত ২০০১ সালে নিখোঁজ হন তিনি। এর পর কেটে যায় দীর্ঘ ২২টা বছর। অবশেষে ২২ বছর পর নিখোঁজ হওয়া মাজেদা বেগমকে ফিরে পেলেন তার সন্তানেরা।
এ যেন অবিশ্বাস্য রূপকথার মত হলেও গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) ঘটনাটি ঘটেছে। খবর পেয়ে বোদাপাড়া গ্রামে গেলে মাজেদার ছেলে গ্রাম পুলিশ ফজলুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলে এমন চিত্র।
বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়লো মানুষের জটলা। সামনে যেতেই দেখা গেলো সবাই ঘিরে রেখেছেন ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে। ২২ বছর পর ফিরে আসার খবরে দেখতে ছুটে গিয়েছেন তারা। তবে এই বৃদ্ধা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে জ্বিনের কবলে পড়েই নিখোঁজ ছিলেন বলে বলছেন সন্তানরা। এক পর্যায়ে মাহানের মাধ্যমে জাদুটোনায় খোঁজার চেষ্টা করলেও তা বৃথা হয়।
জানা যায়, শুক্রবার (১৪ জুলাই) সন্তানরা খবর পান নিখোঁজ মাজেদা খাতুন বেঁচে আছেন। তার সন্ধান মিলেছে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার শালবাহান ইউনিয়নের হাকিমপুর ইসলামবাগ এলাকায়। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মাকে ফিরে পান পঞ্চগড় সদরের সাতমেরা ইউনিয়নের বোদাপাড়া গ্রামের সন্তানরা। বর্তমানে তিনি সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের কর্মরত বড় ছেলে গ্রাম পুলিশ ফজলুলের বাড়িতে রয়েছেন। এর আগে গত ২২ বছর আগে তেঁতুলিয়ার হাকিমপুর ইসলামবাগ এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আফাজ উদ্দীন ওরফে দেবারু তাকে নিজ বাড়িতে রেখে দেখভাল করে আসছিলেন।
মাজেদা খাতুন বোদাপাড়া গ্রামের মৃত বশির উদ্দীনের স্ত্রী। গত ২২ বছর আগে ৪ ছেলে ও ৪ মেয়ে সন্তানকে রেখেই নিখোঁজ হয়ে যায় তিনি। নিখোঁজের পর বিভিন্ন মাধ্যমে খুজে না পেয়ে মাকে মৃত ভেবেছিলেন সন্তানসহ প্রতিবেশীরা। হঠাৎ তার নিজ বাড়িতে আসায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
কথা হয় ছেলে ফজলুল হকের সাথে। তিনি বলেন. মা নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজার পরেও পাওয়া যায় নি। একসময় মাহানের মাধ্যমে জাদুটোনা করে মায়ের সন্ধানের চেষ্টা করেও আমরা বের্থ হই। একসময় ভেবেছিলাম মা আর বেঁচে নেই। তবে ২২ বছর পর শুক্রবার কাজিপাড়া গ্রামের এক আত্বীয় হাকিমপুর ইসলামবাগ গ্রামে গেলে আমার মাকে দেখে ছোট বোন খতেজা বেগমকে তিনি জানান। এর পর আমার বোন গিয়ে আমাদের জানালে মা আমাকে চিন্তে পেরে গলা ধরে পড়ে। পরে মেম্বারের মাধ্যমে মাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। অপর দুই ছেলে হামিদুল ও ফেদৌস বলেন, একসময় আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে সব আল্লাহর ইচ্ছা। মাকে ফিরে পেয়েছি।
এদিকে জন্মের পর বাবা-মায়ের কাছে দাদীর নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনলেও, দাদীকে প্রথম দেখায় আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নাতনি ফারজানা আক্তার।
প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনাটিকে অলৌকিক ঘটনা বলাই যায়। কারণ তারা বিভিন্ন এলাকায় খোজার পরেও তাদের মাকে পায় নি। অবশেষে ২২ বছর পর পেয়েছে। এমন ঘটনা এ এলাকায় আগে ঘটে নি।
সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ওই নারীর সন্ধান পাওয়ার পর তার ছেলেরা আমাকে অবগত করে। এর পর বিকেলে ওই এলাকায় গিয়ে ওই এলাকার ইউপি সদস্য জাহিরুলকে সাথে নিয়ে তাদের মাকে সন্তানদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
এফআর/অননিউজ