প্রায় সাত মাস বেতন-ভাতা বন্ধঃ বিপাকে কুড়িগ্রামের পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা

শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম।।

কুড়িগ্রামে ঝড়ে পড়া শিশুদের নিয়ে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা গত সাত মাস ধরে বেতন বঞ্চিত। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় না হওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ‘ছিন্নমুকুল বাংলাদেশথ ৪২০টি শিখন কেন্দ্র নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অর্থাভাবে সরকারের এ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানাযায়, দেশে শতভাগ শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক পিইডিপি-৪ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। (পিইডিপি-৪) এর মূল লক্ষ্য প্রাক-প্রাথমিক হতে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিদ্যালয়গামী শিশুর একীভূত, সমতাভিত্তিক মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। কুড়িগ্রাম জেলার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহন করে ‘ছিন্নমুকুল বাংলাদেশথ সংস্থা। জেলার ছয়টি উপজেলা রাজারহাট, উলিপুর, ভূরুঙ্গামারী, চিলমারী, রৌমারী এবং চররাজিবপুরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২২ সালে জেলার ৪২০টি শিখন কেন্দ্রে ১২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৪৮৬১ জন শিক্ষার্থীকে মূলধারায় সংযুক্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে ৭৭৩৯ জন শিক্ষার্থী ৫ম শ্রেণিতে অধ্যায়ন করছে। প্রকল্পে বর্তমান ৪২০ জন শিক্ষক/ শিক্ষিকা, ৩৯ জন সুপারভাইজার, ৬ জন উপজেলা ম্যানেজার, ৬ জন অফিস সহায়ক ও ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ সর্বমোট ৪৭৮ জন কর্মরত রয়েছেন।

প্রকল্পের ‘ছিন্নমুকুল বাংলাদেশথ এর প্রোগ্রাম হেড সুশান্ত পাল জানান, আমাদের ৬ টি উপজেলায় ৪২০ টি শিখন কেন্দ্র চালু রয়েছে। কেন্দ্রগুলোর শিক্ষক বা সুপারভাইজারগণ নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যম গত ডিসেম্বর/২৩ পর্যন্ত বেতন-ভাতা পেয়েছেন। এরপর আর কোনো অর্থ ছাড় হয়নি। ফলে শিক্ষক-কর্মকর্তারা বেতন বঞ্চিত রয়েছেন। দেয়া যাচ্ছেনা স্কুলগুলোর আবাসন ভাড়া। ফলে কিছু সমস্যা তৈরী হচ্ছে।তবে সংস্থা নিজ খরচে শিখন কেন্দ্রের সব শিক্ষা উপকরণ থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীদের গ্রেড পরিবর্তনের পরীক্ষা গ্রহন করে মূলধারায় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাই সুচারুরূপে কার্যক্রমটি সম্পন্নের জন্য অর্থ ছাড় হওয়া প্রয়োজন।

কুড়িগ্রাম উলিপুর উপজেলার শিখন কেন্দ্রের শিক্ষক বিজয় লক্ষি বলেন, দীর্ঘ সাত মাস বেতন না পাওয়ায় তারা অমানবিক অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। আত্মীয়স্বজনরাও আর টাকা ধার দিচ্ছেন না, দোকানিও বাকি রাখা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। খুব কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে।

রাজারহাট উপজেলার সুপারভাইজার উমর ফারুক বলেন, এই চাকরিই আমার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু গত সাত মাস বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছি।
জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক (অ:দা:) সৈয়দ ফিরোজ ইফতেখার বলেন, বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী কুড়িগ্রাম জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সব উপজেলায় আইভিএ রিপোর্ট অনুযায়ী কেন্দ্র চলমান রয়েছে। তবে ডিসেম্বর/২৩ এর পরে অর্থমন্ত্রণালয় আর কোনো অর্থ ছাড় করেনি। প্রকল্পের সফল সমাপ্তি ও সব শিক্ষার্থীকে মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে হলে প্রকল্পটি ৩০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত চলমান রাখা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরো দেখুনঃ