বাগমারায় চুলার আগুনে পুড়ে শিক্ষিকার মৃত্যু, দগ্ধ দুই ছেলে
বাগমারা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
রাজশাহীর বাগমারায় তিনতলা একটি ভবনে অগ্নিকান্ডে এক স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। আগুন থেকে বাঁচতে তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে তার দুই ছেলে আহত হয়েছেন। তারা দগ্ধও হয়েছেন। শুক্রবার ভোর রাতে উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের হাসনিপুর গ্রামের মাদারীগঞ্জ বাজারে এই দুর্ঘটনা ঘটে। অগ্নিদগ্ধ দুই সহোদরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত স্কুল শিক্ষিকার নাম ফরিদা ইয়াসমিন (৫০)। তিনি দুর্গাপুর উপজেলা শিবপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা এবং বাগমারার হাসনিপুর গ্রামের এজাজুল বাশার স্বপনের স্ত্রী। তাদের আহত দুই ছেলে হলেন- রাশেদুল হক বাশার (২৬) ও রাফিউল হক বাশার (২১)।
রাশেদুলের শরীরের ৭৫ শতাংশ ও রাফিউলের শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান রঞ্জু চিকিৎসকের বরাদ দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন। আহত রাশেদুল একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী এবং রাফিউল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনতলার ওই ভবনটি এক সময় ছিল আশা সিনেমা হল। সিনেমা হলটি বন্ধ হওয়ার পর হাসনিপুর গ্রামের বাসিন্দা দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী এজাজুল বাশার স্বপন কিনে নেন। সিনেমা হলের তিনতলায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। কয়েকজন ভাড়াটেও ছিলেন। তবে ঈদের কারণে তারা গ্রামের বাড়িতে গেছেন। এ ছাড়া ভবনের দ্বিতীয়তলা বিভিন্ন এনজিও’র অফিস আর প্রথমতলায় বিভিন্ন দোকানের মালামাল রাখার জন্য গুদাম হিসাবে ব্যবহৃত হত। অগ্নিকান্ডের সময় ভবনের মালিক এজাজুল বাশার স্বপন গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। ফয়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন স্কুলশিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন। ভোরে তিনতলায় গ্যাসের চুলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। প্রতিবেশিরা টের পেয়ে চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হলে সকালে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হন। ততক্ষণে বাড়িতে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র ও মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, তারা আগুন নেভানোর সময় দেখতে পান, তিনতলা থেকে দুই ভাই রাশেদুল ও রাফিউল দগ্ধ অবস্থায় লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যান। দ্রুত তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আগুন নিয়ন্ত্রনে আসার পর তারা ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তিনতলার একটি কক্ষে স্কুল শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনের পোড়া লাশ দেখতে পান।
থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। রাজশাহীর এডিশনাল এসপি সনাতন চক্রবর্তী শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বাগমারা ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান রোববার যুগান্তরকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ভবনের তিনতলায় গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। কারণ সেখানে রান্নার ব্যবস্থা ছিল।