রংপুরে ১২৪০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

প্রায় সাড়ে চার বছর পর আজ রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগ দিতে দিবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে পুরো জেলাটি উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সর্বত্র সাজ সাজ রব। সড়ক-মহাসড়ক ব্যানার, ফেস্টুন এবং তোরণে ছেয়ে গেছে। আজ বুধবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

জেলা প্রশাসন ও দলীয় সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে জনসমর্থন চাইতে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। জেলা স্কুলের মাঠে নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে সমাবেশের মঞ্চ। সকাল থেকে সমাবেশে স্থানীয় ও দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন। দুপুর ২টায় শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। বিকাল ৩টায় সমাবেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে দুপুর দেড়টায় হেলিকপ্টারযোগে রংপুরে পৌঁছাবেন এবং বিকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকার উদ্দেশে বিভাগীয় শহর ত্যাগ করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

মঙ্গলবার দুপুরে সমাবেশস্থল পরিদর্শনে এসে সব প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই রংপুরের উন্নয়নের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। কারণ রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন তিনি।’ আওয়ামী লীগের গত সাড়ে ১৪ বছরের শাসনামলে বিভাগের আট জেলার প্রতিটি উপজেলায় অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী রংপুরের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রায় ১২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতোপূর্বে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে একটি করে নভোথিয়েটার হবে। তারই ধারাবাহিকতায় রংপুর শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে রংপুর উপশহরে নির্মিত হতে যাওয়া ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির ওপর ১০তলা বিশিষ্ট নভোথিয়েটারটি এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর জেলার বিট্যাক সেন্টার, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা হোস্টেল এবং বিএমডিএ’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এ ছাড়া ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলো হলো—শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিংপুল, রংপুর পালিচড়া স্টেডিয়াম, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। পাশাপাশি রংপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—রংপুর সিটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল, রংপুর সিটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—নলেয়া নদীর ১৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার পুনরায় খনন, আলাইকুমারী নদীর ১৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার পুনরায় খনন, নৈমুল্লা বিলের ১৪ দশমিক ৫৭ একর পুনরায় খনন, চিকলী বিলের ১৯ দশমিক ৬৩ একর পুনরায় খনন, ভারারদহ ও পাটোয়া কামরী বিলের ২২ দশমিক ৮৯ একর পুনরায় খনন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—পীরগাছা উপজেলা চৌধুরানী থেকে শঠিবাড়ী আরঅ্যান্ডএইচ পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়নকাজ, পীরগাছা উপজেলা ভেন্ডাবাড়ী থেকে খালাশপীর পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারকাজ, কাউনিয়া উপজেলা টেপামধুপুর থেকে রাস্তার পুনর্বাসন কাজ। মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর ওপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট-কাকিনা আরঅ্যান্ডএইচ সড়কে ৪০ মিটার সেতু নির্মাণ এবং কাউনিয়া উপজেলার পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—রংপুর মেডিক্যাল কলেজ বহুমুখী ভবন, মিঠাপুকুর উপজেলায় হেলেঞ্চা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, পীরগঞ্জে মাদারগঞ্জ ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, পীরগঞ্জের ১৪ নম্বর চতরা ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট বেগম রোকেয়া আধুনিক হাসপাতাল এবং পীরগঞ্জের খালাশপীর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। অন্য প্রকল্পগুলো হলো—পীরগঞ্জ উপজেলার ২৫৪০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং রংপুর কারখানা ও সংস্থা পরিদর্শন অফিস ভবন।

এসকেডি/অননিউজ

আরো দেখুনঃ