সোনাগাজীতে আখেরী মোনাজাতের মধ্যে শেষ হলো ৩দিনের আঞ্চলিক ইজতেমা
জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি।।
ফেনীর সোনাগাজীর বিস্তির্ণ চরাঞ্চলে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হলো তিন দিনের আঞ্চলিক ইজতেমা। চরচান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পূর্ব চরচান্দিয়া গ্রামের বিস্তির্ণ চরে ২৪ নভেম্বর বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ করে এই আঞ্চলিক ইজতেমা শুরু হয়। ইজতেমায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৬০টি তাবলীগ জামায়াতের সাথীরা সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১৫ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহন করেন।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও তাবলীগ জামায়াতের সাথীরা জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় ফেনী জেলায় তাবলীগের আঞ্চলিক ইজতেমা সম্পন্ন করতে ফেনী সদর উপজেলার পুরাতন বিমান বন্দরে স্থান নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি চেয়ে তাবলীগের জেলা আমিরের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। জেলা প্রশাসনের থেকে অনুমতি না পেয়ে বুধবার মধ্য রাতে প্রায় সহস্রাধিক তাবলীগ জামায়াতের সাথী সোনাগাজীর বিস্তির্ণ চরে ইজতেমার আয়োজন করা হয়।
রাতের আঁধারে তাঁবু টানিয়ে ইজতেমার প্রস্তুতি নিতে দেখায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে থানা পুলিশকে খবর দিলে সোনাগাজীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আয়োজকদের সাথে কথা বলেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয় তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা সম্পন্ন করে চলে যাবেন।
আয়োজকদের শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা সম্পন্নের নির্দেশ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসি চলে আসেন। এরপর থেকে তাবলীগ জামায়াতের অনুসারী সাথীরা দলে দলে যোগ দিতে থাকেন ইজতেমার মাঠে। রাতারাতি অবকঠামো তৈরী করে ধর্মপ্রাণ মুনল্লিরা ইজতেমা মাঠে জড়ো হন। গভীর রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে মশগুল থেকে গোপন ইবাদতে মিলিত হন মুসল্লিরা।
বৃহস্পতিবার বাদ ফজর প্রফেসর মাও. মহি উদ্দিন ও মাও. সাইফুল্লাহ পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে বয়ান করেন। বাদ জোহর বয়ান করেন মাও. হারুনুর রশিদ। বাদ আছর বয়ান করেন মাও. মোজাম্মেল হোসেন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন প্রফেসর মাও. মহি উদ্দিন। শুক্রবার বাদ ফজর বয়ান করেন মাও. হেলাল উদ্দিন। জুমার নামাজ ইমামতি শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহার কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন ফেনী জেলা তাবলীগ জামায়াতের আমীর হাফেজ মাও. নূর উদ্দিন। বাদ আছর বয়ান করেন মাও. মহি উদ্দিন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাও. সাইফুল্লাহ।
শুক্রবার রাতভর নানা ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে মশগুল থাকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। শনিবার বাদ ফজর থেকে সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত বয়ান করেন মাও. মোজাম্মেল হোসেন ও জেলা আমির হাফেজ মাও. নূর উদ্দিন। সকাল সাড়ে দশটা থেকে ১১টা পর্যন্ত তাবলীগ জামায়াতের কাকরাইল থেকে আগত আমির মুফতি মাও. আহমদ হোসাইন মোনাজাত পরিচালানা করেন।
তিনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহার কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে ইজতেমা সমাপ্তি করেন। মোনাজাতে সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র, উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, সাবেক মেয়র, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন সেন্টু ও চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন সহ প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন। এসময় মহান আল্লাহর দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পূণ্য কামনা করেন। ফেনী জেলা আমির হাফেজ মাও. নূর উদ্দিন ও দায়ীত্বশীল মো. মাসুম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম বলেন, কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সোনাগাজীতে আঞ্চলিক ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএম জহিরুল হায়াত বলেন, মধ্যরাতে তাবলীগ জামায়াতের লোকজন চরাঞ্চলে জড়ো হয়ে ইজতেমার আয়োজন করেন। একটি মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ইজতেমা বন্ধের আবেদন করেন।
খবর পেয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সহ ঘটসাস্থলে গিয়ে তিনি আয়োজকদের সাথে কথা বলেন। বড়ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আয়োজকদের শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা সম্পন্নের নির্দেশনা দেয়া হয়।
আয়েশা আক্তার/অননিউজ24