সোনাগাজীতে চাঁদাবাজির মামলায় বহিস্কৃত আ.লীগ নেতা কারাগারে
জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি।।
ফেনীর সোনাগাজীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার মামলায় নুর উদ্দিন নামে এক বহিস্কৃত আ.লীগ নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার (৯নভেম্বর) দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসাইন তাঁকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। এর আগে ২৫ আগস্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে সোনাগাজী মডেল থানার ওসিকে আদেশ দিয়েছিলেন বিচারক জাকির হোসাইন। আদালতের নির্দেশে আদৃষ্ট হয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করলে সে কিছু দিন আত্মগোপনে চলে যান। গত ১২ অক্টোবর সে উচ্চাদলতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আদালত তাঁকে চার সপ্তাহের জামিন দিয়ে নিন্ম আদলতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। উচ্চাদলতের নির্দেশে সে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন চাইলে বিচারক মো. জাকির হোসাইন তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। এর আগে গত ২৬ আগস্ট একই অভিযোগে তাকে আ.লীগ থেকে বহিস্কুার করা হয়েছিল। নুর উদ্দিন চরদরবেশ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং স্থানীয় নূরানী বাজারের পল্লী চিকিৎসক। সে দক্ষিণ চরদবেশ গ্রামের মো. জেবল হকের ছেলে।
সূত্র জানায়, চরচান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার নুরুল আফসার সবুজ নামের এক দিনমজুরের কাছ থেকে নুর উদ্দিনের ২০ হাজার টাকা আদায়ের ৪ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি জানাজানি হলে অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা নুর উদ্দিন নুরুল আফসারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেন। ভুক্তভোগী নুরুল আফসার বলেন, ঘর বরাদ্দ পেতে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামশেদ আলমের সহযোগিতায় তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেন। এর কিছুদিন পর ওয়ার্ড আ.লীগ নেতা (সাবেক) নুর উদ্দিন তাঁকে জানান, ৪০০ লোক ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও অনেক কষ্টে ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনিসহ (নুরুল আফসার) ১৩ জনের ঘর পাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। ঘরের রেজিস্ট্রির প্রক্রিয়া চলছে, এখন ২০ হাজার টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না। টাকা দিতে অস্বীকার করলে নুর উদ্দিন তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন। পরে নুর উদ্দিন আবারও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা না দিলে ঘর অন্যদের নামে বরাদ্দ হয়ে যাবে বলে জানিয়ে দেন। পরে বাধ্য হয়ে তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নুর উদ্দিনকে ১৫ হাজার টাকা দেন। বাকি টাকা পরে দেবে বলেন।
নুরুল আফসার আরও বলেন, গত ১৮ আগস্ট মঙ্গলবার আদর্শগ্রাম এলাকায় উপজেলা প্রশাসন তাঁকে একটি ঘরের চাবি ও কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়। ওই দিন রাতে নুর উদ্দিন তাঁর কাছে আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে না পেয়ে গালমন্দ করেন। একইভাবে পশ্চিম চর দরবেশ এলাকার কামাল উদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, তাঁকেও সরকারিভাবে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে নুর উদ্দিন পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি ঘর পাননি। আদর্শগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সফি উল্যাহ ও সাহাব উদ্দিন বলেন, নুর উদ্দিন এলাকার বেশ কয়েবকজনের কাছ থেকে ঘর ও বয়স্ক ভাতা এবং প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে চাঁদা নিয়েছেন। তাঁদের দুজনের কাছ থেকেও ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তাঁরা নুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে সালিস বাণিজ্য ও মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ করেন। শেখ বাহার নামে এক বৃদ্ধের নামে প্রধানমন্ত্রী্র আর্থিক সহায়তার টাকা তাঁর মোবাইলে এনে আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে ওই এলাকার প্রায় ২০ জন ব্যক্তির টাকা তাঁর মোবাইলে এনে আত্মসাৎ করেছেন। নাম ঠিকানা অন্যের দিয়ে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনের নগদ নাম্বারে টাকা এনে সে অভিনব কায়দায় আত্মসাৎ করে। একই ঘটনায় নুরুল আবসার সবুজ বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।