সোনারগাঁয়ে অবৈধভাবে কৃষকদের জমি থেকে মাটি উত্তোলন। রাস্তায় ধস, দুই গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
নজরুল ইসলাম শুভ,সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)।।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ৭ গ্রামের কৃষকদের ফসলি জমির মাটি সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক কেটে নিয়ে বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রির করে যাচ্ছে। রাস্তার পাশ থেকে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে দুই গ্রামের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ধসে যায়। এতে দুটি গ্রামের ৬ হাজার মানুষের পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রোববার (৬ মার্চ) ভ্রাম্যমান আদালত ও পুলিশের উপস্থিতিতে বিক্ষুব্দ গ্রামবাসীরা দুটি বেকু আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালত একজনকে তিন মাসের কারাদন্ড দিয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে মাটি সন্ত্রাসী পক্ষ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয়ে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের কাহেনা, বেলাব, পাকুন্দা, আমবাগ সহ ৭ গ্রামের কৃষকদের ফসলি জমির মাটি কেটে, জমিগুলোকে পুকুরে পরিণত করে ওই মাটি আশপাশের বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে।
পেরাব গ্রামের বাসিন্দা শামীম মিয়া জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে জামপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ছগির আহম্মেদের ছেলে ফয়সাল মিয়া ও তার সহযোগি পেরাব গ্রামের সোয়েব মিয়া, সোলায়মান খন্দকার, সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ আলী, আব্দুল মজিদ ও আতাউর রহমানের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি মাটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ৭ গ্রামের কৃষকদের জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে।
স্থানীয় বেলাব গ্রামবাসীদের চলাচলের একমাত্র সড়কের পাশের জমি থেকে বেকু (এক্সেভেট) দিয়ে মাটি কেটে জমিটি পুকুরে পরিণত করার সময় সড়কটি ভেঙ্গে যায় ফলে গ্রামবাসীদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ ও সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ার প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকাল থেকে ৭ গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে মাটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। এসময় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া গ্রামবাসীদের মাটি সন্ত্রাসীরা ধাওয়া করেন। খবর পেয়ে বিকাল ৪টায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মুস্তাফা মুন্না পুলিশ নিয়ে বেলাব গ্রামে উপস্থিত হন। এসময় মাটি সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মোস্তফা ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে মাটি সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত থাকার হাতে নাতে প্রমাণ পেয়ে সোলায়মান খন্দকার নামের এক ব্যক্তিকে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে।
এদিকে ভ্রাম্যমান আদালত ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর আদালত ও পুলিশের উপস্থিতিতে বিক্ষুব্দ গ্রামবাসীরা। অবৈধ মাটি কাজে ব্যবহৃত দুটি বেকু এক্সেভেটর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
রোববার বিকালে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিক্ষুব্দ গ্রামবাসীদের আগুন দেওয়া দুটি বেকু (এক্সেভেটর) আগুনে জ্বলে পুড়ছে। বেলাব গ্রামবাসীদের চলাচলের একমাত্র সড়কটি ভেঙ্গে পুকুরে পরিণত হয়েছে।
বেলাব গ্রামের বাসিন্দা শাহিন মিয়া জানান, বেলাব গ্রামে ২০টি হিন্দু পরিবার রয়েছে। মাটি সন্ত্রাসীরা হিন্দু পরিবারের মালিকানাধীন জমিগুলো টার্গেট করে অবৈধভাবে মাটি কেটে নিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুজন নারী জানান, আমরা মাটি সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকায় বসবাস করতে ভয় পাচ্ছি। কয়েকটি পরিবার মাটি সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফয়সাল মিয়া ও সোয়েব মিয়া জানান, আমরা কৃষকদের কাছ থেকে মাটি কিনে বিক্রি করি এতে দোষের কি আছে? সন্ত্রাসী কোনো কাজের সঙ্গে আমরা জড়িত নই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক সামছুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কিছু ব্যক্তি ওই এলাকায় কৃষকদের জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মুস্তাফা মুন্না জানান, কৃষকদের ফসলি জমির মাটি কাটার প্রমাণ পেয়েছি। আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা অব্যাহত রাখব।