হিলিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অফিস না করাসহ একাধিক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
হিলি প্রতিনিধি
দনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধেজাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ দিবসে উপস্থিত না থাকা সহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাসের বেশীরভাগ কর্মদিবসেই অফিসে উপস্থিত থাকেন না তিনি, আসেন মাঝে মধ্যে। অফিসের পিয়ন ও হিসাবরক্ষক দ্বারা অফিসের সকল কাজ করে নিতে হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার তার বিষয়ে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি জানিয়ে আবারো অভিযোগ জানানো হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
জানা যায়, গত শনিবার সারাদেশের ন্যায় দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলাতেও পালিত হয়েছে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২। সাধারনত জাতীয় শিক্ষা দিবসের আয়োজক হয়ে থাকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। কিন্তু হাকিমপুর উপজেলায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের এই আয়োজক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না। তিনি না থাকায় ব্যাহত হয় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের সকল কার্যক্রম। এছাড়াও পরের দিন রবিবারেও তিনি অফিসে উপস্থিত হননি। ২০১৭ সালে হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন এই কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই অনিয়মিতভাবে অফিস করা এবং অধিকাংশ সময় অনুপস্থিত থাকেন এই শিক্ষা অফিসার। দিনের পর পর দিন নানা কাজে মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও শিক্ষকদের মেলে না তার দেখা। পিয়ন আর অফিস সহকারীরাই করে থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সকল কাজ। তবে নিয়মিত অফিস না করলেও উপজেলার বেশিরভাগ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকেন এই বোরহান উদ্দিন। এর আগেও একাধিকবার তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগীরা। দীর্ঘদিন ধরেই খেয়াল-খুশি মতোই চলে আসছে তার চলাফেরা।
বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ভুক্তভোগী সাইদুর রহমান বলেন, উনি তো একজন বাজে শিক্ষা অফিসার, উনার অত্যাচারে আমরা শিক্ষকরা একেবারে অতিষ্ঠ। মাসেও একদিন ঠিক মতো অফিস করেন না। পিয়ন আর অফিসের হিসাব রক্ষক দ্বারাই সকল কাজ করে নিতে হয়। সম্প্রতি একটা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ হয়ে গেলো সেই দিবসেও তিনি উপস্থিত থাকে না।
হিলির ছাতনি রাউতারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নুরুল আলম বলেন, উনার অনেক সমস্যা রয়েছে সবাই তা জানে, কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খুলে না তার বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে নানা কাজে অফিসে গেলে তার দেখা খুব কম মেলে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক আশরাফুল আলম বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিষয়টি সম্পর্কে গোটা হাকিমপুর উপজেলার মানুষ জানেন, এসম্পর্কে আমি আর নতুন করে কি বলবো? উনি অফিস ঠিক মতো করেন না। এছাড়াও গত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এবিষয়ে তার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আমাকে অপমান-অপদস্থ হতে হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৩ মে) দুপুর ১২ টায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সম্পর্কে জানার জন্য তার অফিসে গিয়ে দেখা যায় তিনি অফিসে উপস্থিত হননি, তার কক্ষের নির্ধারীত চেয়ার রয়েছে ফাঁকা। পরে তার ফোন মোবাইলে কল করা হলে রিসিভ করে মোটরসাইকেল আছি, পরে কথা বলি বলে কলটি কেটে দেয়। পরে তাকে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি আর রিসিভ করেন না।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুর-এ-আলম বলেন, এর আগেও আমরা এই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছি। বর্তমানে আবারো সম্প্রতি হয়ে যাওয়া জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উনি উপস্থিত ছিলেন না। আমি এবিষয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছি। তিনারা এবিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন।
হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ বলেন, আমাদের ব্যর্থতা এমন অযোগ্য অফিসার আমাদের উপজেলায় এখনো অবস্থান করছেন। বিগত দিনে তার বিরুদ্ধ অনেক অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও এবিষয়ে কোন লাভ হয়নি এমনকি তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে এপর্যন্ত অনেক অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এবারও তার অফিস না করা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উপস্থিত না থাকার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপর মহলে জানানো হবে।