নিজের গুলিতে বিজিবি সদস্যের আত্মহত্যা

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা

সাতটা বছর মানসিক যন্ত্রণা আর অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সত্যি বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। এইবার একটু রেষ্ট দরকার। এমন কষ্টের কথা নিজের ফেসবুকে লিখে পোস্ট করে নিজের গুলিতে এক বিজিবি সিপাহী আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পর রাত ৯টায় ময়মনসিংহের খাগডহর এলাকায় অবস্থিত ৩৯ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পে তিনি আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি ৩৯ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক ইউনুস আলী।নিহত সিপাহী ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার বাশ পাদুয়াগ্রামের আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ছেলে সোহরাব হোসাইন চৌধুরী (২৩)। সে ফেনীর পরশুরাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।

জানা যায়, নিজের বেতনের টাকায় সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হওয়ায় তিনি ক্ষোভে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম নিয়ে ভালো কিছু আশা করা মহাপাপ। নামে সরকারি চাকরি কিন্তু বেতনটা ঐ নামের উপরই। ৭ বছর চাকুরি এখনও বাড়িতে গেলে ঠিক মতো একটু কোথাও যাওয়া হয় না ছুটির সময়টাও চোরের মতো থাকতে হয়। গত কিছুদিন আগে আম্মু খুব অসুস্থ হয়ে পড়লো মায়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গেলাম পরীক্ষা নিরক্ষার পর মায়ের জন্য ঔষধ কিনবো সে টাকা আর হাতে নেই পরে মামার কাছ থেকে ধার নিয়ে মাকে কিছু ঔষধ আর গাড়ি ভাড়া দিলাম।এমনটা প্রতিমাসেই হতে থাকে না পারি নিজের খুশি মতো একটা জিনিস কিনতে কিনবা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভালো কিছু খেতে। না পারি পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে। তার মধ্যে বর্তমান বাজারের যা পরিস্থিতি এতে বাজার করা কিনবা সংসার চালানো কতটা কঠিন বুঝানোর মতো না। ছোট ভাইটা শারীরিক ভাবে কিছুটা অক্ষম তার জন্য কিছু করবো তার সুযোগ হয়নি এই জীবনে।

এমন পরিস্থিতি মানুষ প্রশ্ন করে বিয়ে করি না কেন। কিন্তু মানুষকে তো আমার সরকারি চাকরির ভেতর টা দেখাতে পারি না আমার বেতন আমার সুযোগ সুবিধা সেভিংস এই সব কিছুতে অন্য একটা মানুষকে আনা আমার জন্য মরার উপর খাঁড়ার খাঁ। তাই বিয়ে শাদীর চিন্তা করিওনা। শুধু খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারলে খুশি এমন চাইলাম তাও আর হয়ে উঠলো না। ৭ টা বছর মানসিক যন্ত্রণা আর অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সত্যি বড় ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। এইবার একটু রেষ্ট দরকার। আমার পরিবার সহকর্মী সিনিয়র জুনিয়র আমার বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই নিকৃষ্ট কাজের জন্য পারলে ক্ষমা করবেন এই ছাড়া বিকল্প কোনো পথ আমার ছিল না। এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, খবর পেয়ে রাতেই মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিজের বন্দুকের গুলিতেই সে আত্মহত্যা করেছে। তবে ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

সাইফুল ইসলাম সুমন,অননিউজ24।।

আরো দেখুনঃ