পাল্টে যাবে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ, ১০৬ কিলোমিটার মহাসড়কটি উন্নীত হবে ছয় লেনে

সালাহউদ্দিন বকুল, হিলি প্রতিনিধি।।

দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুরত্ব ১০৬ কিলোমিটার। এই মহাসড়ক সংলগ্ন দুইটি কয়লা খনি, একটি পাথর খনি, একটি লোহার খনি, বৃহত্তম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুইটি স্থল বন্দর। সংশ্লিষ্টদের দাবী এ মহাসড়কটি ছয় লেন করা হলে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে মাত্র ১ হাজার ৭শ কোটি টাকা হলেই ১০৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা সম্ভব।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র মতে ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক দিয়ে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় যেতে দুই ঘণ্টা বেশি সময় এবং ৫০ কিলোমিটার বেশি রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। সেখানে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে ৫০ কিলোমিটার কম দূরত্বে ও দুই ঘণ্টা কম সময়ে এ তিনটি জেলায় যাতায়াত করা যায়। তাই এ মহাসড়কে যাতায়াতকারী যানবাহনের সংখ্যাও বেশি। দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করতে হলে মাত্র ১ হাজার ৭শ কোটি টাকা লাগবে। মহাসড়কটির দুই পাশে সড়ক ও জনপথের গড় জমি রয়েছে ৮০ ফিট। মহাসড়কটি ছয় লেন করতে লাগবে ১২০ ফিট জমি। এ এলাকার জমির মূল্য কম হওয়ায় এবং মহাসড়কটি দুই পাশে প্রায় পুরোটাই কৃষি জমি থাকায় অধিগ্রহন খরচও খুব কম পড়বে। বর্তমানে মহাসড়কটির ৮৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯ দশমিক ৭ মিটার প্রসস্ত করার কাজ চলমান।

হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং হিলি স্থলবন্দর আমদানী রফতানি কারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, ফুলবাড়ী কয়লা খনি, বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মধ্যপাড়া পাথর খনি। এসব খনির প্রায় যানবাহন দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক ব্যবহার করে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিলি স্থলবন্দরের ৯৯ শতাংশ পণ্যবাহী যানবাহন দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক ব্যবহার করে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় যানজটের কারনে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হয়। এর উপর সম্প্রতি চালু হয়েছে বিরল স্থল বন্দর। এছাড়া চালুর অপেক্ষায় রয়েছে নবাবগঞ্জের দীঘিপাড়া কয়লা খনি। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়নে মহাসড়কটি ছয় লেন করার কোনো বিকল্প নেই।

দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর-হাকিমপুর-নবাবগঞ্জ- ঘোড়াঘাট) আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উত্তরাঞ্চল অবহেলিতই থেকেছে। বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ থাকায় কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র বিকাশের সম্ভাবনা থাকার পরেও শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দিনাজপুরের কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় উত্তরাঞ্চলের ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কটিও ছয় লেনে উন্নীত হচ্ছে। তাই ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কের সাথে সংযোগ স্থাপনকারী দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা না হয় তবে উত্তরাঞ্চলের ব্যপক শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পিছিয়ে পড়বে। দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করতে তিনি সড়ক, জনপথ ও সেতু মন্ত্রীর কাছে দাবী জানিয়েছেন। সংসদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও জোরালো দাবী জানাবেন।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা জানান, এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করনের বিকল্প নেই। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কটি অপ্রসস্ত রেখে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ছয় লেনে উন্নীত করার সুফল ভোগ করা যাবেনা। ছয় লেন মহাসড়ক নির্মাণে প্রয়োজন ১২০ফুট প্রসস্ত জমি। ১০৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের দিনাজপুর- গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কটির জমি রয়েছে গড়ে ৮০ ফুট। পুরো সড়কটির প্রায় জমিই কৃষি শ্রেণির, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় জমির দামও কম। ফলে মহাসড়কটি খুব সহজেহ ছয় লেনে উন্নীত করা সম্ভব।

আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।

আরো দেখুনঃ
error: Content is protected !!