কুবিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে চিত্তনামার সাময়িকীর মোড়ক উন্মোচন

কুবি প্রতিনিধি:

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠন চিত্তনামা-র উদ্যোগে চিত্তনামা সাহিত্য সাময়িকী ‘গণ-অভ্যুত্থান সংখ্যা’-র মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এই মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

উক্ত মোড়ক উন্মোচনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শীলা। শুরুতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র শহীদ আবদুল কাইয়ূমসহ গণ-অভুত্থানে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

চিত্তনামা সাহিত্য সাময়িকীর লেখক ইয়াসিন আরাফাত বলেন, ‘আমরা আসলে সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই শোষিত হয়ে আসছি। ৭১ কিংবা ২৪ প্রত্যেকটা আন্দোলনেই ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ছিলো অভূতপূর্ব। আওয়ামী শাসনের যে গণহত্যা ও নিপীড়ন তা আসলে ভুলবার নয়। কিন্তু আন্দোলনের পর নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা মলিন করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর পরবর্তী ঘটনাও আসলে আমাদের আশা দেখায় না তেমন। এই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ধূলিসাৎ যাতে নাহয় সে প্রয়াসে চিত্তনামার এই গণ-অভ্যুত্থান সংখ্যা বেশ আশার আলো দেখায়। আর এখানে লেখক হিসাবে আমার লেখা প্রকাশ হওয়ায় আমারও ভালো লাগছে। তবে এই আশার আলো আরও বিস্তৃত হোক সে লক্ষ্যে চিত্তনামা কাজ করবে সে প্রত্যাশা রাখি। ‘

বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.কামরুন নাহার শীলা বলেন, ‘আজকের এই সোস্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় কিছু শিক্ষার্থী মুখোমুখি বসে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় চিত্তনামার উদ্যোগে কাজ করছে এটা দেখে ভালো লাগছে। আসলে মানুষ যখন নিষ্পেষিত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখনই ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়টা আসলে সেরকমই ছিলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনে সকলে যুক্ত হয় আসলে এই গণহত্যা দেখে। আমার ছেলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হত্যা করতে দেখে ঘরে বসে থাকতে পারেনি। আর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তো আসলে এই আন্দোলনের একদম প্রথম সারিতে থাকার কথা। কেননা প্রথম হামলা এখানেই হয়। আসলে ঐ সময়টায় পরিস্থিতি এমনই ছিলো দুদিন হাসপাতালে দৌড়িয়েছি আর দেখেছি মানুষের আহাজারি। প্রতি মূহুর্তে আতংকে ছিলাম কেননা হাসপাতালেও হামলা হয়। চিত্তনামা যতটুকু চেষ্টা করছে তা সুন্দর উদ্যোগ। আসলে এখানে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সাথে যা ঘটে তা তুলে ধরেছে। তাই কোন ধরনের বায়াসনেস হওয়ার সুযোগ নাই এখানে। চিত্তনামার এই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা জারি রাখায় উত্তরোত্তর শুভকামনা রইল।’

চিত্তনামা-র সভাপতি ও সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদক মারুফ শেখ বলেন, ‘চিন্তা ও চিত্তের প্রকাশে আমরা দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে আসছি। এটা আমাদের সাময়িকীর ৩য় সংখ্যা। আমরা সাপ্তাহিক পাঠচক্র, মনীষী স্মরণ ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার পাশাপাশি একটি ত্রৈমাসিক সাময়িকী বের করি। এবারের সংখ্যা ছিলো বিশেষ সংখ্যা।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আসলে আমাদের সকলের আকাঙ্ক্ষার ছিলো। ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানে সকল স্তরের মানুষ যুক্ত ছিলো। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী দৃশ্যপট আগের থেকে ভিন্ন কিছু নয়। আমরা দেখলাম অভ্যুত্থান পরবর্তী নারীদের কৃতিত্বকে নাই করে দিতে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করতে, পাহাড়ে হামলা করতে, পুলিশু হামলা করতে। মব তৈরি করে যে কাওকে হেনস্তা করা এসব ছিলোই। এছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার করা, আহতদের চিকিংসা ও পুর্নবাসন না করাও দৃশ্যমান। এমনকি জুলাই গণ-অভ্যুত্থান কোন এক নির্দিষ্ট গোষ্ঠী পুরোপুরি নিজেদের একক আধিপত্য দাবি করে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। তাই এই ইতিহাস বিকৃত না হয় সে প্রয়াসে আমরা আমাদের এই ক্ষুদ্র পরিসরে প্রকাশ করি গণ-অভ্যুত্থান সংখ্যা।’

আরো দেখুনঃ