কুমিল্লায় ডাক্তারের নামে মামলা, ২ লাখ টাকায় আপোষ, বিভিন্ন দপ্তরে আরো অভিযোগের পাহাড়
কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
কুমিল্লা সদর উপজেলার শঙ্করপুর এলাকায় অবস্থিত জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতির চক্ষু চিকিৎসক সার্জন ডাঃ এম এ মোস্তফা হোসেনের বিরুদ্ধে বিনা রশিদে টাকা নেয়া ও ত্রুটিপূর্ণ অপারেশনের কারনে এক বীর মুক্তি যোদ্ধার চিরতরে দৃষ্টি হারানো এবং মাত্র দুই লাখ টাকায় দফা-রফার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়াও আরো বহু রোগী তার নিকট চোখ অপারেশন করে ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে কোন প্রতিকার না পেয়ে উল্টো হুমকির মুখে রয়েছেন। আদালতে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্থ রোগী এক জন বীর মুক্তি যোদ্ধা ও সেনা বাহিনীর অবসর প্রাপ্ত হাবিলদার। তার নাম আশ্রাফ আলী তিনি গত ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারী সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা করেন।
মামলার বিবরণে দেখা যায়, কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভূলুইন ইউনিয়নের পরতী গ্রামের বসিন্দা আশ্রাফ আলী বিগত ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর চোখের সমস্যা নিয়ে কুমিল্লা সদর উপজেলার শঙ্করপুরে অবস্থিত জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি ও চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি হলে কর্ব্যরত ডাক্তার এম এ মোস্তফা হোসেন(সার্জন) আলী আশ্রাফকে চক্ষু পরীক্ষা করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা পত্রসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেন এবং ঐ চিকিৎসক রোগীর কাছ থেকে অপারেশনের কথা বলে বিনা প্রমানে ৮ হাজার টাকা নিয়ে চোখের নালীর অপারেশন করে ২৯ অক্টোবর তাকে ছাড়পত্র দিয়ে ছুটি দেয়।
অপারেশন পরবর্তীতে রোগী চোখে না দেখার কারনে একই বছেরের ১ ডিসেম্বর ওই হাসপাতালে একই চিকিৎসকের কাছে আবারো চিকিৎসা সেবা নিতে আসলে তখন ওই চিকিৎসক চোখে আমেরিকার তৈরী ল্যান্স দিয়ে ছানী অপারেশনের কথা বলে আবারো রশিদ ছাড়াই ১০ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরের দিন ২ ডিসেম্বর রোগীর ডান চোখে ল্যান্স প্রতিস্থাপনের অপারেশন করেন সার্জন মোস্তফা হোসেন। ৩ ডিসেম্বর তাকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলেন চিকিৎসক। এ সময় রোগী ডান চোখে কোন কিছু দেখে না বলে জানালে তখন সার্জন ডাঃ এম এ মোস্তফা হোসেন বলেন, আপাতত বাড়ি যান ২/৩ দিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। পরবর্তীতে বেশ কয়েক দিন পার হয়ে গেলেও চোখে দেখার কোন উন্নতি না হওয়ায় ৮ ডিসেম্বর পুনরায় রোগী চিকিৎসকের কাছে চোখে না দেখার কারণ জানতে হাসপাতালে ছুটে আসেন। চোখে একেবারেই না দেখার বিষয়টি তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালের ১০৩ নং কক্ষ থেকে রোগীকে লাঞ্ছিত করে বের করে দেয় এবং একই সাথে অভিযুক্ত চিকিৎসক ভবিষ্যতে আবারো আসলে পুলিশে দেয়ার হুমকী দেয়।
মামলার বিবরণে আরো বলা হয়, ক্ষতিগ্রস্থ রোগী তার অপচিকিৎসার প্রতিকার চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারী দফতরে লিখিত আবেদন করলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাধ্য হয়ে বাদী হয়ে গত ২২ জানুয়ারী ২০২০ ইং কুমিল্লার আদালতে চিকিৎসক এম এ মোস্তফা হোসেনকে বিববাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন। ভুক্ত ভোগী পরিবারের দায়ের করা মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য জেলা সিভিল সার্জনের নিকট পাঠায়। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে রোগীকে পরীক্ষা করায় এবং উক্ত তদন্ত কমিটি আশ্রাফ আলীর দৃষ্টি হারানোর জন্য অভিযুক্ত সার্জন ডা. এম এ মোস্তফা হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে ডাক্তার এমএ মোস্তফা দোষী সাবস্ত হওয়ার পর বাদীকে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে মাত্র দুই লাখ টাকায় মামলা তুলে নিতে বাধ্য করেন। এ বিষয়ে মামলার প্রধান স্বাক্ষী ও বাদির পুত্র বধু রানু বেগম জানান, আমার শ্বশুরকে গোপনে খবর দিয়ে নিয়ে ঐ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী আয়েত আলী একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেয় আর পরবর্তীতে তারা মাত্র ২ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলতে বাধ্য করে।
তাছাড়াও কুমিল্লার দেবীদ্বারের ঘোষগড় গ্রামের আরমান হোসেন নামে এক রোগী অনুরুপ ডা. এম এ মোস্তফা হোসেনের নিকট অপারেশন করে ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরে অভিযোগ করে কোন প্রতিকার পায় নি বলে জানায়। আরমান হোসেনের লিখিত অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, ডাক্তার মোস্তফা হোসেন বিনা রশিদে তার নিকট হতে ১০ হাজার টাকা নিয়ে চোখের মাংশ অপারেশনে করে, কিন্তু অপারেশনের পর সে আর চোখে না দেখে আবারো ঐ চিকিৎসকের নিকট ফিরে গেলে সে চিকিৎসক তাকে দূর্ব্যবহার করে রুম থেকে বের করে দেন। একই জেলার মুরাদ নগরের ছালিয়া কান্দির নিলুফা বেগমও চোখে পানি পড়ার কারনে এই মোস্তফা হোসেনের নিকট অপারেশন হয়ে সুস্থ হয় নি, পরে ঐ চিকিৎসকের নিকট জানতে গেলে তার সাথেও খারাপ ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করেন। পরে তিনিও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে কোন প্রতিকার পায় নি। বর্তমানে আলেখরচর চক্ষু হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাঃ মাঈনুদ্দিন নামে এক মেডিকেল অফিসারের একটি লিখিত অভিযোগও আশ্রাফ আলীর মামলার নথির সাথে পাওয়া যায়। সেখানে বিবরনে দেখা যায় এই সার্জন মোস্তফা হোসেন শুধু খারাপ অপারেশন করে রোগীদের সাথেই প্রতারনা করে এমন নয়, সে বহিঃবিভাগে ফার্মেসীর ইনচার্জ হওয়ার সুবাধে বিভিন্ন বেনামী কোম্পানীর নিষিদ্ধ ঔষধ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ক্রয় করে জুনিয়র চিকিৎসকদের মাধ্যমে ব্যবস্থা পত্রে লিখতে বাধ্য করে এবং নিজেও লিখে।
এ সকল ঘটনা বিএমডিসি এ্যাক্ট ২০১০ অনুযায়ী সুষ্পষ্ট প্রফেশনাল ইসফেমাস কন্ডাক্ট যা সংশ্লীষ্ট চিকিৎসকের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করার মত অপরাধের সামীল বলে চিকিৎসক সমাজ জানান।