কুষ্টিয়ার আজিম আলী আখ (গ্যান্ডারি) চাষে ভাগ্য বদলাতে চান
জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ।।
আখ বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। পাট চাষের চেয়ে আখ চাষ অধিক লাভজনক বলে চাষীরা পাটের চেয়ে আখ চাষেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাতেই কিছু না কিছু আখের চাষ হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আখ চাষ করে ভাগ্য বদলাতে চান কুষ্টিয়ার আজিম আলী। তিনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের দুল্লা মন্ডলের ছেলে। গতবছর তার ফুফাতো ভাই রাকিবকে সঙ্গে নিয়ে সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। এবার নিজেই আবাদ করেছেন এই আখ।
আজিম আলী জানান, আগে এই অঞ্চলে দেশি জাতের প্রচুর আখের আবাদ হতো। তবে এখন আর হয় না। লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় আখের আবাদ। তাছাড়াও গত বছর কুষ্টিয়ার জগতি চিনিকলও বন্ধ ঘোষণা করায় আর কোন আখ চাষ হয় না। তাই কয়েকবছর হলো এই উপজেলায় গ্যান্ডারি জাতের আখের চাষ শুরু হয়েছে। আমি এবার তিন বিঘা চাষ করেছি। আখ বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি, আখ চাষে ভালো লাভ হবে। এই গ্যান্ডারি আখ অন্য আখের মতোই। রোগবালাইও খুব একটা নেই বললেই চলে-যোগ করেন তিনি। যশোর থেকে এ আখের বীজ নিয়ে আসা হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। প্রতি বিঘার আখ ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে। আখের পরিচর্যা করতেই বেশি খরচ হয়। ১ বছর ধরে প্রতিদিন চারজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। বিঘাপ্রতি আখ রয়েছে ২৮ থেকে ২০ হাজারের মতো। জমি থেকেই ক্রেতারা পাইকারি ২৮-৩০ টাকা পিস হিসাবে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। জমি থেকে আখ কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকসয় বিক্রি করে। এই অঞ্চলে এ জাতের আখ আর কোথাও না থাকায় চাহিদা ভালো।
মিরপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম হোসেন বলেন, কৃষক আজিম আলী এবারে বিএসআরআই আ-৪২,বিএসআরআই আখ-৪৭ মালয়েশিয়া আবাদ করেছেন। এই আখের ঝোপে অনেক দিন পর্যন্ত কুশি বের হয়৷ তিনি বলেন, পরিপক্ক কুশির আখ কাটার সময় অল্প বয়স্ক অর্থাৎ অপরিপক্ক কুশির আখ এক সঙ্গে কেটে মাড়াই করলে তা হতে নিম্নমানের রস ও চিনি উৎপন্ন হয়৷ সেইজন্য ২/৩ মাস পরে যে সমস্ত কুশি বের হয় সেগুলো কেটে ফেলা উচিত৷ আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাে সার্বিক সহযোগীতা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছি।
ক্রেতা হাসান আলী বলেন, ‘গেন্ডারি আখ খুবই সুস্বাদু, রসালো ও মিষ্টি। তাই এর চাষ পদ্ধতি বিষয়ে তার কাছে জানতে এসেছি। তার এই সাফল্য দেখে আমিও কয়েক বিঘা জমিতে এই গ্যান্ডারি চাষ করতে চাই। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, আখের জমি একটু নিচু বা অসমান হলে বর্ষার সময় ক্ষেতে পানি জমে যাবার সম্ভাবনা থাকে৷ নিষ্কাশনের সুবন্দোবস্ত করে বৃষ্টি অথবা সেচের অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে৷ নচেৎ আখের বৃদ্ধি স্থগিত হয়ে যাবে, নানা প্রকার রোগ দেখা দিবে এবং চিনি ও গুড়ের উৎপাদন কমে যাবে৷ গ্যান্ডারি জাতের আখ চাষ খুবই লাভজনক। মিরপুর উপজেলায় এ জাতের আখ চাষ শুরু হয়েছে। আশা করছি, লাভজনক হওয়ায় এ জাতের আখের চাষ আরও বাড়বে।
আহসানুজ্জামান সোহেল/অননিউজ24।।