খেলনায় বিপজ্জনক মাত্রার সীসা: স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা
অনলাইন ডেস্ক।।

বাংলাদেশি খেলনায় উচ্চমাত্রার সীসা (লেড) সহ অন্যান্য ক্ষতিকর ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) আয়োজিত “টক্সিক প্লে-টাইম: আনকভারিং হেভি মেটালস ইন চিলড্রেনস প্লাস্টিক টয়েস” শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আজ ঢাকার লালমাটিয়ায় এক প্রেস ব্রিফিং-এ এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফিলিপাইন ভিত্তিক সংস্থা ব্যান টক্সিক্স-এর এক্স-রে ফ্লুরোসেন্স (XRF) প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার চকবাজার থেকে সংগৃহীত ৭০টি প্লাস্টিকের খেলনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ খেলনাতেই আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারিত নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি পরিমাণে ভারী ধাতু যেমন ক্রোমিয়াম, অ্যান্টিমনি, পারদ এবং ক্যাডমিয়াম রয়েছে। কিছু খেলনায় এসব ধাতুর পরিমাণ নিরাপদ সীমার চেয়ে ১০ থেকে ৭০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে।
একটি নীল রঙের খেলনা গাড়িতে (আমান টয় গার্ডেন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত) সীসার পরিমাণ নিরাপদ সীমার ২৬ গুণ (২,৩৫০ পিপিএম), পারদের পরিমাণ ১৮ গুণ (১,০৮০ পিপিএম) এবং ক্রোমিয়ামের পরিমাণ ২৩ গুণ (১,৪০০ পিপিএম) পাওয়া গেছে।
উজ্জ্বল রঙের খেলনাগুলোতে ভারী ধাতুর সর্বোচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। এছাড়া, ২০% খেলনায় বিপজ্জনক মাত্রায় ক্লোরিন ও ব্রোমিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা খেলনা তৈরিতে পিভিসি প্লাস্টিক ও ফ্লেম রিটাডেন্ট ব্যবহারের প্রমাণ দেয়।
“আমান টয় গার্ডেন”, “খোকন প্লাস্টিক প্রোডাক্টস” এবং “শাহজালাল টয়স গ্যালারি”-এর খেলনাগুলোতে নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খেলনাগুলো আমদানিকৃত খেলনার চেয়ে বেশি বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মুর্শেদ বলেন, সরকার কর্তৃক অবিলম্বে কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড বাস্তবায়ন করা উচিত এবং খেলনা উৎপাদনকারীদেরকে এর জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, খেলনা শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তাই খেলনাগুলোকে বিষমুক্ত করে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আবুল হাশেম বলেন, খেলনার মাধ্যমে শিশুরা প্রতিদিন নিউরোটক্সিন ও কার্সিনোজেনের সংস্পর্শে আসছে, যা তাদের বিকাশগত ক্ষতি করছে।
ডিওই-এর সিনিয়র কেমিস্ট জনাব কাজী সুমন বলেন, এই ভারী ধাতুগুলো ধীরগতির বিষ হিসেবে কাজ করে এবং শিশুদের স্নায়বিক ক্ষতি সহ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, সফল বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে দৃঢ় সমন্বয় প্রয়োজন।
বিএসটিআই-র সহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল করিম জানান, খেলনার নিরাপত্তা মান নিশ্চিতকরণে একটি নির্দেশিকা প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শীঘ্রই বিএসটিআই-র কাউন্সিল কমিটিতে পেশ করা হবে।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, এটি কেবল একটি স্বাস্থ্য সংকট নয়, এটি শিশুদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
সংস্থাটি খেলনার মান নিয়ন্ত্রণে ভারী ধাতুর ব্যবহার মাত্রা নির্ধারণ করে সুষ্ঠু নির্দেশনা প্রণয়ন, পণ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা, সঠিক লেবেলিং নিশ্চিত করা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে ভোক্তা সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার এবং উৎপাদকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।
সূত্র:বিডি২৪লাইভ
ই/অননিউজ ২৪