গাজীপুরে ১৩২ কাউন্সিলর প্রার্থী এসএসসি পাশ করেননি

আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া মোট ৩৩৩ জন মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীদের বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলিয়ে ৩৩৩ প্রার্থীর ২৯.৭৩ শতাংশই মামলার আসামি। আর ৪০.২৪ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে। সোমবার (২২ মে) সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমুর সরকার এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।

সুজনের তথ্য মতে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী আট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী। মোট ৩২৫ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ১৩২ জনই মাধ্যমিক পাশ করেননি। এর মধ্যে ২৪৬ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৯২ জন মাধ্যমিক পাস করেননি, যেখানে স্নাতকোত্তর রয়েছেন মাত্র ২১ জন। আর সংরক্ষিত ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বী নারী কাউন্সিলরের মধ্যে ৪০ জনই মাধ্যমিক পাশ করেননি। এদের মধ্যে স্নাতকোত্তর রয়েছেন আটজন। তবে মোট প্রার্থীর ২৯.৭৩ শতাংশই বিভিন্ন মামলার আসামি।

সংবাদ সম্মেলনে সুজন জানান, প্রতিদ্বন্দ্বী আট মেয়র প্রার্থীর মধ্যে দু’জনের (২৫ শতাংশ) বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা হলেন, জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে অতীতে তিনটি মামলা ছিল। বর্তমানে কোনো মামলা নেই। তার বিরুদ্ধে করা মামলার মধ্যে একটি ছিল হত্যা মামলা। ২৪৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৮৪ জনের (৩৪.১৫ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা রয়েছে। ৪২ জনের (১৭.০৭ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২৮ জনের (১১.৩৮ শতাংশ) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা ছিল। বর্তমানে ৮ জনের বিরুদ্ধে (৩.২৫ শতাংশ) হত্যা মামলা রয়েছে। চারজনের বিরুদ্ধে অতীতে হত্যা মামলা ছিল।

এদিকে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৭৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জনের (১৬.৪৬ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলা আছে। তিনজনের (৩.৮০ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি মামলা ছিল। একজনের বিরুদ্ধে বর্তমানে একটি হত্যা মামলা চলমান। তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৩৩৩ প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের (২৯.৭৩ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৪৭ জনের (১৪.১১ শতাংশ) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২৯ জনের (৮.৭১ শতাংশ) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল। ৩০২ ধারায় (হত্যা মামলা) ৯ জনের (২.৭০ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং পাঁচজনের বিরুদ্ধে (১.৫০ শতাংশ) অতীতে মামলা ছিল। তবে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে মামলা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, যা কোনোভাবেই ইতিবাচক নয় বলছে সুজন।

প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে সুজন জানায়, স্নাতকোত্তর মেয়র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি ও হারুন-অর রশিদ। স্বতন্ত্র নারী মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’ উল্লেখ করেছেন এবং জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী রাজু আহমেদ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বলে হলফ-নামায় উল্লেখ করেছেন। মেয়র ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগের পেশা ব্যবসা। মেয়র পদে তিন জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৯২ জন পেশা হিসেবে ‘ব্যবসা’ উল্লেখ করেছেন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৭৯ জনের মধ্যে ৩৯ জন গৃহিনী।

এ সময় সুজন’র গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশিরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী তৌফিক জিল্লুর রহমান, গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম রাজীব, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব উদ্দিন আহাম্মদসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিবৃন্দ।

এফআর/অননিউজ

আরো দেখুনঃ