গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে নেত্রকোনার কৃষকদের

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

নেত্রকোনায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ব্যাপক ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। বারি উদ্ভাবিত টমেটো খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। ফলে তারা দামও পাচ্ছেন ভালো। কৃষকরা বলছেন অধিক ফলনে এ টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন তারা। তাই আগামীতে আরো বেশি জমিতে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি, রোগ-প্রতিরোধক উন্নত ফলনশীল এই টমেটোর চাষ খুব দ্রুত সময়েই সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। শনিবার (৫ নভেম্বর) নেত্রকোনা জেলার কুনিয়া গ্রামে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর মাঠ দিবসের আলোচনা এসব কথা বলেন বক্তারা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ ময়মনসিংহের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: মনিরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন বারি’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগ গাজীপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: মাজহারুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন বারি’র সরেজমিন গবেষণা বিভাগ গাজীপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: ফারুক হোসেন, নেত্রকোনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হাফিজুর রহমান খান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সরেজমিন বিভাগ ময়মনসিংহের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: এমরাউল ইসলাম। মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে প্রায় শতাধিক টমেটো চাষী অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মো: মাজহারুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষাবাদ কৃষকদের কাছে ব্যপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে নেত্রকোনা অঞ্চলে বিভিন্ন গ্রামের বারি উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটোর বিভিন্ন জাত তথা বারি হাইব্রিড টমেটো ৪, ৮ ও ১১ চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ জাতটি একটি মেগা ভ্যারাইটি কারণ সারা দেশে এ জাতটি ইতোমধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষিকে লাভজনক কৃষিতে রূপান্তরিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

বিশেষ অতিথি ড. মো: ফারুক হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশে বছরে ১৫ হাজার মেট্রিক টন গ্রীষ্মকালীন টমেটো উৎপাদিত হচ্ছে। পাশাপাশি বাইরের দেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন টমেটো আমদানি করতে হচ্ছে। তাই দেশে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর উৎপাদন বাড়ানো গেলে কৃষকেরা যেমন লাভবান হবে একই সাথে আমাদের টমেটো আর আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। এ বছর আমরা বারি’র পক্ষ থেকে আমাদের নিজেদের উৎপাদিত হাইব্রিড টমেটোর বীজ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করেছি এবং আগামীতেও আমরা কৃষকদেরকে গুণগত মানসম্পন্ন বীজ তুলে দিতে চাই। আর এ জন্য প্রয়োজনে আমরা বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করবো।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হাফিজুর রহমান খান বলেন, “এক ইঞ্চি জমি পতিত রাখা যাবে না” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুনিয়া গ্রামে কৃষকরা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে নিজেরা সাবলম্বী হবে এবং তাদের দেখে অন্যান্য কৃষকরাও উৎসাহিত হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. মো: মনিরুজ্জামান বলেন, নেত্রকানায় বাণিজ্যিকভাবে গ্রীষ্মকালীন টামেটোর চাষ হচ্ছে। বাজারে এ টমেটোর চাহিদা অনেক। চাষ খুব সহজ ও লাভজনক। এ টেমেটো সারা বছর দেশের টমেটোর চাহিদা পূরনে সক্ষম। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ সরেজমিন বিভাগ চাষিদের টমেটো চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সব ধরনের সহযোগীতা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: এমরাউল ইসলাম জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর অভিযোজন পরীক্ষা, উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কমিউনিটি বেসড পাইলট প্রোডাকশন গ্রোগ্রাম শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এ টমেটো চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ টমেটো চাষে দক্ষ করা হয় গ্রীষ্মের আবহাওয়ার সাথে শতভাগ সামঞ্জস্য এ নতুন জাতের টমেটো চাষে আগামীতে কৃষিতে বিপ্লব সৃষ্টি করবে।

কুনিয়া গ্রামের আব্দুল হক বলেন, আগে জুমতে ধান সহ অন্যান্য ফসল চাষ করতেন। গত তিন বছর যাবত ময়মনসিংহ কৃষি গবেষণার বিজ্ঞানীদের সার্বিক সহযোগিতায় বারি জাতের টমেটো চাষ করেছেন। প্রথম মৌসুমেই গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। গাছে ফুল ও ফলের সমাহার দেখে তিনি খুব খুশি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে টমেটো চাষ করবেন বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের কৃষক এমদাদুল হক বলেন, মাত্র ৩৩ শতক জমিতে বারি টমেটো চাষ করেছি এতে আমার প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার মতো টমেটো বিক্রি করেছি। আমার এক মৌসুমে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা লাভ হতে পরে ।

আরো দেখুনঃ