চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে নুসরাতের কবরে পিবিআইয়ের ফুলেল শ্রদ্ধা, বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া

জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী)

ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত সেই মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার কবরে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সোমবার দুপুরে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরিফুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম, পরিদর্শক ফয়েজুল ইসলাম , ইমতিয়াজ আহমেদ ও নাজিম উদ্দিন সহ ২০ সদস্যের একটি দল নুসরাতের কবরে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান।

এসময় কবর জিয়ারতে অংশ নেন নুসরাত জাহান রাফির পিতা মাওলানা এ কে এম মুসা মানিক, বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান, ছোট ভাই রাশেদুল হাছান রায়হান ও পিবিআই সদস্যরা।

মোনাজাত পরিচালনা করেন নুসরাত জাহান রাফির পিতা মাওলানা এ কে এম মুসা। তিনি মোনাজাতে নুসরাতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। দোষীদের দ্রুত শাস্তি কামনা করেন। এছাড়া দেশ-বিদেশে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে হেদায়েত কামনা করেন। নুসরাতের উপর অগ্নি সন্ত্রাসের পর থেকে এ যাবৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, পিবিআই, গণমাধ্যমকর্মী সহ দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণ কামনা করেন। নুসরাতের কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দেয়ার জন্য তিনি মহান আল্লাহর কাছে করজোড় ফরিয়াদ জানান। কবর জিয়ারত শেষে পিবিআইয়ের সদস্যরা নুসরাতের বাবা ও ভাইকে শান্তনা দেন। তারা নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে তার মা শিরিনা আখতারের সাথে কুশল বিনিময় করে তাকেও শান্তনা প্রদান করেন। সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। বাদ জোহর উত্তর চরচান্দিয়া জামে মসজিদে বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।
এর আগে সকালে বাড়িতে পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদি মাহমুদুল হাসান নোমান, তার প্রতিক্রায় জানান, আমরা মহান আল্লাহর দরবারে আমার বোনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমরা শুনেছি আসামিরা উচ্চ আদালতে আপীল করেছেন। শীঘ্রই উচ্চ আদালতে আপীলের শুনানী শুরু হবে। উচ্চ আদালতের কাছেও আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। আদালত যে রায় দেন আমরা সে রায় মেনে নেবো। আমাদের পরিবারের জন্য একমাত্র হুমকি আসামিদের স্বজনদের ব্যবহৃত ফেসবুক। তাদের ফেসবুক আইডি থেকে আমাদের পরিবার ও আমার বোন নিয়ে বিষোদগার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। নুসরাতের পিতা একেএম মুসা মানিক বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই। আমাদের দৃষ্টি এখন উচ্চ আদালতের দিকে। আদালতের রায়ের প্রতি আমরা সবসময় শ্রদ্ধাশীল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতে যেমনি আমাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত; ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষার আরবী প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে হল থেকে ডেকে পাশের ভবনের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় তাকে তার সহপাঠিরা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে হত্যার চেষ্টা চালায়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে নুসরাত জাহান রাফি। ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলাটিতে মাত্র ৬১ কার্যদিবসে ৮৭ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্ততর্ক গ্রহণ করা হয়।

একই বছরের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে একলাখ টাকা করে জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত করেন। আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীণ সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

আরো দেখুনঃ