দেবিদ্বারে কৃষকের আর্তনাদ শুনবে কে, ‘বিলিন হচ্ছে ফসলী’

মাটিখেকুদের দৌরাত্মে নিঃস্ব হচ্ছে কৃষক

দেবিদ্বার প্রতিনিধি।।
দেবিদ্বারে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে মাটিখেকুরা। ভেকু, ভেলচা আর ড্রেজারের দৌরাত্মে প্রতিদিনই কমছে ফসলী জমি। জমি হারিয়ে দিনে দিনে নিঃস্ব হচ্ছেন নিরীহ কৃষক।

দেবিদ্বার উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর দুই তীরের চর গুলিতে যেন চলছে মাটিকাটার মহোৎসব। একই চিত্র দেখা যায় ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের কৃষি জমিগুলোতেও। উপজেলার অন্তত: ৩০টি এলাকায় ড্রেজার মালিক ও মাটি খেকুদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের বরাবরে বারবার লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলেনি বলে জানিয়েছেন একাধিক ভোক্তভ‚গী।

ভোক্তভূগীরা আরো জানান, প্রভাবশালী মাটি খেকুরা প্রথমে নানা কায়দায় কোনো এক কৃষকের সামান্য মাটি কিনে নেন নগদ টাকায় অথবা মৎস খামারের নামে আবাদী জমিতে ভেকু দিয়ে পুকুর খনন করেন। তার পর ড্রেজার বা ভেকু বসিয়ে দূর দুরান্তে মাটি বিক্রি শুরু করে। খাড়া ভাবে মাটি কাটার কারণে পাশের জমিগুলো ধীরে ধীরে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। প্রতিবাদ করতে গেলে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে হয় জমির মালিকদের। এক পর্যায়ে দালালের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ওই কৃষকের জমিও হাতিয়ে নেয় তারা।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গোমতী নদীর দুইপাড়ে অসংখ্য ট্রাক্টর চরের ফসলী জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর ও খলিলপুর এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ঘেষে খাড়া ভাবে মাটি কেটে নিয়ে গেছে মাটিখেকুরা। এতে আসন্ন বর্ষায় নদীর ঢলে বাঁধ ধ্বসে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন নদীপাড়ের একাধিক বাসিন্দা। বিষ্ণপুর গ্রামের মৃত: আদম আলীর পুত্র মাঈনুদ্দিন ও মইনুদ্দিন জানান, একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে সামসুল হক এবং মামুন তাদের বসত বাড়ি ও বাঁধ ঘেষে খাড়াভাবে মাটি কেটে নিয়ে গেছে। এতে চলতি বর্ষায় গোমতীর বাঁধ যেমন ঝুকিতে তাদের বাড়িটিও ঝুকিতে। যে কোনমূহুর্তে ভ‚মি খেকুদের খননকৃত গর্তে ধ্বসে পড়তে পারে বাঁধসহ বসত বাড়িটি। মাঈনুদ্দিন ও মইনুদ্দিন আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ নিজেদের ভিটে রক্ষায় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করায় আমাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অমানবিকভাবে মারধর করেছে মামুনের লোকজন।

সুবিল ইউনিয়নের ওয়াহেদপুর গ্রামের কৃষক আলী হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে ওয়াহেদপুর কাজী বাড়ির কাজী খোরশের ড্রেজার মেসিন দিয়ে ওয়াহেদপুর পূর্বপাড়া বিলে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন শুরু করছে। প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করে লাভ নেই তাই অভিযোগ করিনি।

    ফাতেমা আক্তার নামে ৫০ উর্ধ এক নারী বলেন, সন্তানদের মূখে ভালো খাবার না দিয়ে, নিজের অসুখে ঔষধ না খেয়ে, গার্মেন্টসে, তুলা কারখানায়, বাসা বাড়িতে ঝি চাকরানির কাজ করে, সুবিল ইউনিয়নের পশ্চিম পোমকাড়া গ্রামে ৩৩ শতাংশ জমি ১২ লক্ষ টাকায় কিনেছি। নজরুল মেম্বারের ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার কারনে, আমার সেই জমি ফরিদ মিয়ার মৎস খামারে ধীরে ধীরে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।

গত দু’দিনে জমির অনেক অংশ ভেঙ্গে পড়ে গেছে। ওই চক্রের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেছি। তিনি ফোনে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নিতে বলেন, ল্যান্ড অফিসে আবেদন করতে বলেন। আমি বলেছি আমি গরিব মাানুষ ওদের সাথে মামলা করে জমি রক্ষা সম্ভব না।
গুনাইঘর উত্তর ইউপির ধলাহাস গ্রামের আবুল হাসেম জানান, ওই গ্রামের প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ি মৃত; সাহেব আলী মেম্বারের পুত্র নজরুল ইসলাম সুদন অবৈধ ড্রেজারে মৎস খামারের নামে কৃষি জমি ধ্বংস করছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পক্ষে প্রতিকারে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও থানা পুলিশকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাইনি। আমরা একদিকে প্রতিবাদ করে সন্ত্রাসীদের হুমকীর মূখে আছি, অপর দিকে আমাদের কৃষি জমিগুলো ড্রেজারের গর্তে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিক নজরুল মেম্বার বলেন, আমি ডেজার চালানো বন্ধ করে দিচ্ছি, আর এ ব্যবসা করবনা। এখনো তিনি ড্রেজারে মাটি উত্তোলন করেন জানালে তিনি বলেন, আমি মাটি তুলিনি, আমার ড্রেজার মেসিন ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতেই একটু চালু করেছিলাম।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, গোমতী নদীর চরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি ধ্বংস করে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে ভোক্তভ‚গিদের অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। ইতিমধ্যেই আমরা একাধিক অভিযান চালিয়ে তা প্রতিরোধ করছি এবং পর্যায়ক্রমে আরো অভিযান চালানো হবে।

আরো দেখুনঃ